জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, রুমী চৌধুরী
একজন বিশিষ্ট মনীষীর মতে, একটা জাতিকে যদি ধ্বংস করতে চাও তবে তাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা কর, গ্রন্থাগার ধ্বংস করে দাও—তাহলে সে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। পাকিস্তানি জান্তারা ইতিহাস থেকে সুশিক্ষার বদলে কুশিক্ষা নিয়ে বাঙালি জাতিকে নিধনের খেলায় মত্ত ছিল। যার করুণ পরিণতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, রাশিদুল হাসান, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ফজলে রাব্বিসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। এছাড়া কিশোরগঞ্জের গাংগুটিয়া জমিদার ভূপতীনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর কাছ থেকে খাবার খেয়ে, তাঁর গান শুনে, তাঁকে তাঁর দুই সহকারীসহ হত্যা করা হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা যথেষ্ট রয়েছে। যেমন অটোমান সাম্রাজ্যের সময় অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। হিটলারের নাৎসি বাহিনী অনেক ইহুদি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। কম্বোডিয়ার খেমার রুজ শাসনের সময় অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তালিকাবদ্ধভাবে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার নজির ইতিহাসে আর নেই।
একাত্তরের ঢাকা অঞ্চলের তৎকালীন প্রধান মেজর রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে উপরোক্ত বুদ্ধিজীবীসহ আরও অনেক নিহত বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাছাড়া সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের দ্য রেপ অব বাংলাদেশ গ্রন্থে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করে ধর্মীয় লেবাসে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে জাতিকে মেধাশূন্য করা। ধর্মকে ব্যবহার করে এবং ভারতীয় আজ্ঞাবাহী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে বাঙালি জাতি ও সত্তাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ কায়েম করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
তাই যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাঁরা দেশ ও জাতির কাছে যুগে যুগে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।