নিজস্ব প্রতিবেদক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার কোনো সুযোগ নেই এবং রাষ্ট্র এ বিষয়ে শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করবে। তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে ভূমিকা রাখবে এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। রবিবার সকালে রাজধানীর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পরিচয় ও সাংবিধানিক ভিত্তির মূল স্তম্ভ। এই ইতিহাসের বিকৃতি শুধু অতীতকে অস্বীকার করা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রচারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় আর্কাইভের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক ইতিহাস চর্চা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে এবং সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আইন ও সংবিধানের আলোকে দায়িত্ব পালন করবে, যাতে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। জুলাই সনদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সনদে উল্লিখিত নীতিমালা ও লক্ষ্যসমূহ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা আরও জানান, সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানকালে যেসব সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করছে বলে তিনি জানান। সংস্কার কার্যক্রমে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে সকাল ৭টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতির এই কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ও তাদের অবদানের স্বীকৃতির অংশ হিসেবে পালিত হয়।
সকাল সোয়া ৭টার কিছু পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল আনুষ্ঠানিক সালাম জানায়। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরাও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এই শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং জাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় স্মরণ করার একটি রাষ্ট্রীয় আয়োজন হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে প্রতি বছর এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
সরকারি সংশ্লিষ্টরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা, ইতিহাসের সঠিক উপস্থাপন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলাই বর্তমান উদ্যোগগুলোর মূল লক্ষ্য।