রাজনীতি ডেস্ক
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশকে নেতৃত্বহীন ও মেধাহীন করার উদ্দেশ্যে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বক্তব্যে বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা করেছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত অর্জন এখনও পূর্ণতা পায়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অতীতের সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়েও নেতৃত্ব ও মেধাকে লক্ষ্য করে সহিংসতার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সাবেক এই উপদেষ্টা দাবি করেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে ব্যাহত করতেই শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, একাত্তরে যেমন বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মেধাহীন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তেমনি সাম্প্রতিক হামলার মধ্য দিয়ে একই ধরনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের পরাজিত শক্তি এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের একটি ‘হিট লিস্টে’ রাখার তথ্যও তিনি শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা প্রমাণ তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি জানান, অতীতে যেভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করা হয়েছে, তেমনি বর্তমানেও রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী যে কোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এই দিবস কেবল অতীত স্মরণ করার জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রের মেধা, নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার দিন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মের ওপর ন্যস্ত হয়েছে, তা পালনে সবাইকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কী ধরনের তদন্ত চলছে, সে সম্পর্কে এ সময় কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা না গেলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর পালিত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের হত্যা করে। স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড জাতির ইতিহাসে এক গভীর বেদনার অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা হয়।
এ বছরের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা অতীতের সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের মেধা ও নেতৃত্বকে সুরক্ষিত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্যও সেই আলোচনারই অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের তুলনা টেনে সতর্কতার আহ্বান জানানো হয়েছে।