খেলাধুলা ডেস্ক
কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে ঘিরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে শনিবার ব্যাপক বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ায় হাজার হাজার দর্শক প্রত্যাশিতভাবে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আয়োজনে বিঘ্ন ঘটে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে মেসিকে সময়ের আগেই মাঠ ছাড়তে হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রকাশ্যে লিওনেল মেসি ও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসিকে একনজর দেখার আশায় বিপুলসংখ্যক দর্শক উপস্থিত হন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। মাঠ ও গ্যালারিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে নিরাপত্তার স্বার্থে মেসিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করানো হয়।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানান, সল্টলেক স্টেডিয়ামে ঘটে যাওয়া অব্যবস্থাপনায় তিনি গভীরভাবে বিচলিত। তিনি বলেন, ওই সময় তিনি নিজেও ক্রীড়াপ্রেমী ও ভক্তদের সঙ্গে একই পথে অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিনি লিওনেল মেসি ও উপস্থিত সব ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটি পুরো ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে বলে জানানো হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে লিওনেল মেসির চারপাশে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড় বাড়তে থাকে। দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল, মেসি মাঠে উপস্থিত হয়ে পুরো স্টেডিয়াম ঘুরে ভক্তদের অভিবাদন জানাবেন। তবে নিরাপত্তাজনিত ও সময়সংক্রান্ত কারণে তা সম্ভব হয়নি। এর পরপরই দর্শকদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত দর্শকদের কেউ কেউ ব্যারিকেড ভেঙে ফেলছেন, মাঠের ভেতরে বোতল ও চেয়ার নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হস্তক্ষেপ করে। তবে ততক্ষণে অনুষ্ঠান কার্যত বন্ধ হয়ে যায় এবং দর্শকদের একটি বড় অংশ হতাশ হয়ে স্টেডিয়াম ছাড়তে বাধ্য হন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেক দর্শক অভিযোগ করেন, টিকিট কিনেও তারা মেসিকে সঠিকভাবে দেখতে পাননি। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, টিকিটের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও মাঠে সাধারণ দর্শকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করা হয়নি। কেউ কেউ টিকিটের অর্থ ফেরতের দাবি জানান। এই অভিযোগগুলোও তদন্তের আওতায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনাটি ঘিরে রাজ্য প্রশাসনের প্রস্তুতি ও বড় আন্তর্জাতিক তারকাকে কেন্দ্র করে জনসমাগম ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের উচ্চপ্রোফাইল ক্রীড়া অনুষ্ঠানে আগাম পরিকল্পনা, স্পষ্ট প্রোটোকল এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর দায়ী পক্ষগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আনা হয়, সেদিকে নজর থাকবে ক্রীড়ামহল ও সাধারণ দর্শকদের।