আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে দুইজন নিহত এবং আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে পরীক্ষা চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে। তবে হামলার পর সন্দেহভাজন ব্যক্তি পালিয়ে যায় এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম হামলার বিষয়ে অবগত হয়। জরুরি সেবা নম্বর ৯১১-এ ফোন পাওয়ার পর পুলিশ ও চিকিৎসা দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠায়। রোড আইল্যান্ডের মেয়র ব্রেট স্মাইলি হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানান, নিহত ও আহতের সংখ্যা পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। তিনি বলেন, হামলাকারীর পরিচয় এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিকেল ৪টা ২২ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীদের জন্য একটি জরুরি সতর্কবার্তা জারি করে। এতে জানানো হয়, বারুস ও হোলে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফিজিক্স ভবনের আশপাশে সক্রিয় বন্দুকধারীর আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের দরজা বন্ধ রাখতে, মোবাইল ফোন নীরব অবস্থায় রাখতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়। এ নির্দেশনার ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
পুলিশ পরে সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে তল্লাশি চালালেও সেখানে কোনো বন্দুকধারীকে খুঁজে পায়নি। তদন্তকারীরা জানান, সন্দেহভাজন ব্যক্তি কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে এবং হামলার পর কীভাবে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছে, তা নিরূপণে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, কালো পোশাক পরা এক ব্যক্তি পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে এই বর্ণনা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
হামলার কিছু সময় পর অনলাইনে সন্দেহভাজনকে আটক করার বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিশ্চিত করেনি। ফলে পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন আটক হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিলেও পরবর্তীতে সেই বক্তব্য সংশোধন করেন। কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানায়, সন্দেহভাজন এখনো পলাতক এবং জনসাধারণকে যাচাই না করা তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এই ঘটনায় ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায় এবং আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়েছে। ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদার করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রবেশপথে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্দুক হামলার ঘটনা আগেও ঘটেছে, যা ক্যাম্পাস নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নীতিমালা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সীমিত কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।