খেলাধুলা ডেস্ক
লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে ঘরের মাঠে জয় তুলে নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান আরও শক্ত করল বার্সেলোনা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ক্যাম্প নউয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে হান্সি ফ্লিকের দল ২–০ গোলে জয় পায়। দ্বিতীয়ার্ধে করা দুটি গোলই আসে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ও অধিনায়ক রাফিনিয়ার পা থেকে। এই জয়ের মাধ্যমে ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারের পর লিগে টানা সপ্তম ম্যাচে জয় পেল কাতালান ক্লাবটি।
ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে আধিপত্য বজায় রাখে বার্সেলোনা। প্রায় ৮০ শতাংশ সময় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে তারা আক্রমণ গড়ে তোলে। পুরো ম্যাচে স্বাগতিকরা ২৪টি শট নেয়, যার মধ্যে সাতটি লক্ষ্যে ছিল। বিপরীতে ওসাসুনা তিনটি শট নেয়, যার দুটিই ছিল লক্ষ্যে। তবে বল দখল ও আক্রমণে পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে কয়েকটি মুহূর্তে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা।
ম্যাচের ২০তম মিনিটে ওসাসুনা গোলের একটি বড় সুযোগ পায়। ফরোয়ার্ড আন্তে বুদিমির বক্সের ভেতর থেকে শট নিলে বার্সেলোনার গোলরক্ষক হোয়ান গার্সিয়া তা সফলভাবে প্রতিহত করেন। এই সেভ স্বাগতিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ প্রথমার্ধে গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যেতে হয় দুই দলকে।
২৩তম মিনিটে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছিল। মার্কাস র্যাশফোর্ডের ক্রসে ছয় গজ বক্সের সামনে হেড করে বল জালে পাঠান ফেররান তরেস। তবে দীর্ঘ সময় ভিএআর পর্যালোচনার পর গোলটি বাতিল করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আক্রমণের শুরুতে ডান প্রান্তে নেওয়া ছোট কর্নারের সময় রাফিনিয়া অফসাইড অবস্থায় ছিলেন, যদিও তরেস নিজে অফসাইডে ছিলেন না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হলেও স্কোরলাইন অপরিবর্তিত থাকে।
প্রথমার্ধজুড়ে বার্সেলোনা আক্রমণ করলেও ওসাসুনার রক্ষণভাগ সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে বিরতিতে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে আক্রমণের গতি আরও বাড়িয়ে দেয় স্বাগতিকরা। মাঝমাঠে পেদ্রি ও ডি ইয়ংয়ের বল নিয়ন্ত্রণ এবং প্রান্তে লামিনে ইয়ামাল ও র্যাশফোর্ডের গতিময় খেলায় ওসাসুনার রক্ষণভাগ ক্রমেই চাপে পড়ে।
অবশেষে ৭০তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় বার্সেলোনা। মাঝমাঠ থেকে বল এগিয়ে নিয়ে পেদ্রি ডান দিকে রাফিনিয়াকে পাস দেন। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের শক্তিশালী শট নেন তিনি। ওসাসুনার দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে যাওয়া সেই শট জালে জড়িয়ে যায়। এই গোলের মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটে এবং স্বাগতিকরা ম্যাচে এগিয়ে যায়।
গোল হজমের পর ওসাসুনা আক্রমণে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করে। তবে বার্সেলোনার রক্ষণভাগ তুলনামূলকভাবে নির্ভুল ছিল। ম্যাচের শেষ দিকে কাতালান দলটি বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে প্রতিপক্ষের আক্রমণের গতি কমিয়ে দেয়।
নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট বাকি থাকতে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন রাফিনিয়া। লামিনে ইয়ামালের পাস বক্সে পেয়ে ডান প্রান্ত থেকে ক্রস করেন ডিফেন্ডার জুল কুন্দে। বলটি ওসাসুনার এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করলে দূরের পোস্টে ভলিতে ফাঁকা জালে বল পাঠান রাফিনিয়া। এই গোলের মাধ্যমে ম্যাচের ফলাফল কার্যত নির্ধারিত হয়ে যায়।
এই জয়ের ফলে ১৭ ম্যাচে ১৪ জয় ও এক ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট দাঁড়ায় ৪৩। এক ম্যাচ কম খেলে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিগের শীর্ষে ব্যবধান বাড়াতে এই জয় বার্সেলোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
লা লিগার ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা এবার নজর দেবে কোপা দেল রের দিকে। আগামী মঙ্গলবার শেষ বত্রিশের ম্যাচে তারা তৃতীয় স্তরের দল গুয়াদালাহারার মুখোমুখি হবে। শিরোপাধারী হিসেবে এই প্রতিযোগিতায়ও ভালো পারফরম্যান্স ধরে রাখাই ফ্লিকের দলের লক্ষ্য বলে জানা গেছে।