নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই সঙ্গে অনুষ্ঠেয় গণভোটের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে আজ রবিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিকল্পনা, ঝুঁকি মূল্যায়ন, বাহিনীগুলোর সমন্বয় এবং মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, বৈঠকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব এবং মাল্টিমিডিয়া মনিটরিং সেল (এমটিএমসি)-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, সম্ভাব্য সহিংসতা প্রতিরোধ, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং প্রার্থীদের চলাচল ও প্রচার কার্যক্রমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে দিকনির্দেশনা নির্ধারণই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটগ্রহণের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন। কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ছাড়াও ব্যালট পরিবহন, ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা, গণনা কেন্দ্র এবং ফলাফল ঘোষণার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বৈঠকে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েন ও দায়িত্ব বণ্টন নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিজস্ব দপ্তর ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছে। গতকাল শনিবার ইসি সচিবালয় থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো এক চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, কমিশনের নিজস্ব তিনজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং মাঠপর্যায়ের সব নির্বাচন অফিস ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানানো হয়। নির্বাচনকালীন সময় কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্বাচন পরিচালনার স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক একটি সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের এক সম্ভাব্য প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলযোগে আসা দুই ব্যক্তি তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার পর নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে ও পরে যেকোনো ধরনের নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে এমটিএমসির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হবে। বৈঠকে এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকর সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা জোরদার হয়। আজকের বৈঠক থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো মাঠপর্যায়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচন ও গণভোট ঘিরে সম্ভাব্য ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।