নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রপাগান্ডা, অপতথ্য ও ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়, সে বিষয়ে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং অধীন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই ছিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভা।
সভায় উপদেষ্টা বলেন, সরকার একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম ব্যবস্থা দেখতে চায়। তথ্যপ্রবাহ অবাধ থাকবে, তবে তা হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ, যাচাইকৃত এবং দায়িত্বশীল। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করাই সরকারের লক্ষ্য নয়; বরং সঠিক তথ্যের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিত করাই সরকারের উদ্দেশ্য।
নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দ্রুত জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই, উৎসের নির্ভরযোগ্যতা এবং উপস্থাপনার ভারসাম্য নিশ্চিত করা জরুরি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণমাধ্যম ইতোমধ্যে গণতন্ত্র চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এই ভূমিকা আরও পেশাদার, নৈতিক ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে তথ্য ছড়িয়ে পড়ার গতি বহুগুণে বেড়েছে, যা একই সঙ্গে সুযোগ ও ঝুঁকি তৈরি করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতা, পেশাদারিত্ব ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার সঠিক তথ্যের পক্ষে থাকবে এবং এ লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ সহজ করা, সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং ভুল তথ্য প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্বাধীনতা, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার—এই তিন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কেবল প্রশাসনিক নয়; এর সঙ্গে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তরগুলোকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জনবান্ধবভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) নূর মো. মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার ও প্রেস) ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
মতবিনিময় শেষে উপদেষ্টা সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, অবাধ ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ছাড়া টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নির্বাচন সামনে রেখে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা শুধু গণমাধ্যমের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি যৌথ জাতীয় দায়িত্ব হিসেবেও বিবেচিত হওয়া উচিত।