বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ যখন নতুন অধ্যায়ের দিকে একটা নতুন সূর্য দেখছে, বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বপ্ন দেখছে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করবে।
ঠিক সেই সময় আবার নতুন করে বাংলাদেশের শত্রুরা হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। গত শুক্রবার যে ঘটনা ঘটেছে (ওসমান হাদির ওপর হামলা) আমরা তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং আমরা আশঙ্কা করছি যে এরকম আরও ঘটনা ঘটতে পারে। গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতা এবং ঢাকা মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় অসাধ্য হয়ে উঠেছে, চতুর্দিক থেকে যখন মুক্তিবাহিনী ঢাকা ঘিরে ফেলেছে, সেই সময়ে পাক হানাদার বাহিনী এই বাংলাদেশের সব মেধাকে বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য এই দেশের বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে দোসরদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, গবেষক, কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ অনেককেই হত্যা করেছে। এভাবেই আমরা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়েছি। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে মেধাহীন করে দেওয়ার জন্য এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটানো হয়। আজকে আমাদের এই দিনে বারবার আমরা সেই কথা মনে করি। একইভাবে আমরা সবাই জানি যে ২০২৪ সালে আমাদের সন্তানদের গণহত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমাদের নেত্রী যিনি অসুস্থ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছি, শ্রদ্ধা জানিয়েছি।
আমরা এই শপথ নিয়েছি যে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করব, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভাব দেখাচ্ছে, তারাই নতুন বাংলাদেশ করতে পারবে : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, যে শক্তি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আজ সেই শক্তি ভোল পাল্টে এমন ভাব দেখাচ্ছে যে তারাই নতুন বাংলাদেশ করতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ এ কথা বিশ্বাস করতে পারে না। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে আমার দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে বলে আমি অন্তত মনে করি না। আমরা লড়াই করে, যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন ভূখণ্ড এনেছি। যার ফলে আমরা এখানে বেঁচে আছি, টিকে আছি। এই ভূখণ্ড আজ স্বাধীনতার দিকে থাকবে, নাকি যারা স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছিল, তাদের দিকে যাবে, আজকে এই প্রশ্নগুলো সামনে আসছে এই জন্য যে, সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই শক্তি আজকে আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে সেই ধর্মের নামে।’ আসন্ন নির্বাচন দুটি শক্তির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে রয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। অন্যদিকে রয়েছে সেই পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা অতীতে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। এখন ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।