নিজস্ব প্রতিবেদক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার এক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্যারাট্রুপারদের মধ্যে শেষ ছয়জন তাঁদের নিজস্ব নেমপ্লেটের পরিবর্তে সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সেনার নেমপ্লেট পরিধান করে প্যারাট্রুপিং করবেন। নিহত শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রেস উইংয়ের তথ্যমতে, ১৬ ডিসেম্বর সকালে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একযোগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বহন করে প্যারাট্রুপিং করবেন। এটি প্যারাট্রুপিংয়ের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে অংশ নেওয়া ছয়জন প্যারাট্রুপার নিহত শান্তিরক্ষী সেনাদের নামাঙ্কিত নেমপ্লেট পরিধান করে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান এবং প্রাণ উৎসর্গকারী সেনাসদস্যদের স্মরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সেনা নিহত হন। ওই হামলার পর আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিভিন্ন দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়মিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। শহীদ বেদি, মূল স্তম্ভ এবং দর্শনার্থীদের চলাচলের পথ নতুনভাবে রংতুলির মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের লেক সংস্কার করে নতুন পানি সংযোজন করা হয়েছে এবং সেখানে লাল শাপলা স্থাপন করা হয়েছে। পুরো চত্বরে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ ও সাদা রঙের ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে, যাতে বিজয় দিবসের পরিবেশ আরও বর্ণিল হয়ে ওঠে।
নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্মৃতিসৌধ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা ও এলইডি লাইট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সব আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে দিবসটি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার খান আনু জানিয়েছেন, ১৬ ডিসেম্বর ভোরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এই সময় পুষ্পস্তবক অর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সাধারণ জনগণের প্রবেশ সীমিত থাকবে। আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শেষে সর্বসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক জানিয়েছেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন থাকে। বিজয় দিবস উপলক্ষে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে চার হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
বিজয় দিবসের এসব কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী বাংলাদেশি সেনাদের স্মরণ করে দেশের ভূমিকার বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে।