আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) অনুযায়ী ওড়িশা রাজ্যে ৩৫ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদের হাতে নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ওড়িশায় সিএএর আওতায় নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫১ জনে। একই আইনের অধীনে আসামেও প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি নারী ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
ওড়িশা রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের রাজধানীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন নাগরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয় ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে প্রণীত হয়েছে। রাজ্য সরকার আইন অনুযায়ী যোগ্য আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজ্য সরকারের জনশুমারি ও অভিবাসন সংক্রান্ত দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ৩৫ জনই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে দীর্ঘদিন ধরে ওড়িশায় বসবাস করে আসছিলেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিএএর বিধান অনুসারে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওড়িশায় একই আইনের আওতায় আরও প্রায় ১ হাজার ১০০টি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেগুলো পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি করা হবে।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ সালে সংসদে পাস হলেও এর কার্যকর বিধিমালা চলতি বছরের ১১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। বিধিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করা অমুসলিম অভিবাসীরা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজ্য প্রশাসনগুলো আবেদন গ্রহণ, যাচাই ও অনুমোদনের কাজ পরিচালনা করছে।
এদিকে একই আইনের আওতায় আসাম রাজ্যে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি নারী নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ৪০ বছর বয়সী ওই নারী আসামের শ্রীভূমি জেলার বাসিন্দা হিসেবে বর্তমানে বসবাস করছেন। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও প্রশাসনিক সূত্র জানায়, তিনি ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেন। শুরুতে পারিবারিক চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি শিলচর এলাকায় আসেন এবং সেখানেই স্থানীয় এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিয়ে হয় এবং তিনি স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস শুরু করেন।
দম্পতির একটি সন্তান রয়েছে এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে আসামে বসবাস করছেন। যদিও ওই নারীর পরিবারের অন্যান্য সদস্য এখনো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থান করছেন, তবুও তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন। সিএএর বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন এবং প্রয়োজনীয় নথি ও আবাসন সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করেন। যাচাই-বাছাই শেষে তাকে নাগরিকত্বের সনদ দেওয়া হয়।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর ৫(১)(সি) ধারা এবং সংশোধিত ৬বি ধারার বিধান প্রযোজ্য হয়েছে। এসব বিধানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করেন এবং টানা কমপক্ষে সাত বছর ভারতে বসবাস করেন, তবে নিবন্ধনের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। আসামে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ভারতে সিএএ কার্যকর হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্যে এর বাস্তবায়ন ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে। ওড়িশা ও আসামে সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব প্রদানের ঘটনা আইনটির প্রয়োগে একটি নতুন ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনগুলো জানিয়েছে, আবেদনকারীদের যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আইনগত কাঠামো ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রক্রিয়াধীন আবেদনগুলোর নিষ্পত্তির মাধ্যমে আরও অভিবাসী এই আইনের আওতায় নাগরিকত্ব পেতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।