জাতীয় ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ ঘটনায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শঙ্কা দেখছে না।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন। তিনি জানান, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটি সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করবে না। নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণার প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আগের সময়ের তুলনায় অনেক উন্নত। তিনি জানান, অতীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছিল, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং তারা ভোটের দিনসহ পুরো নির্বাচনী সময়জুড়ে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ব্যালট ও ভোটগ্রহণ সরঞ্জাম পরিবহন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, নির্বাচনকে ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা অনিয়ম প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
নির্বাচনের ভবিষ্যৎ ও অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, বিশেষ করে ঊনসত্তর, একাত্তর এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে তরুণ সমাজ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তাঁর মতে, আসন্ন নির্বাচনেও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নির্বাচনকে আরও শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য করবে।
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, এবারের নির্বাচন কয়েকটি দিক থেকে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা চালু করা। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট শ্রেণির ভোটারদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গণভোট আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা থাকলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা আরও সহজ হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাহসী পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা ও সহযোগিতাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতি ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আবারও জানানো হয়, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মূল ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না এবং নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।