নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য অনিয়ম প্রতিরোধ ও আইনি ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে রোববার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব কমিটি মাঠপর্যায়ে ভোটসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত, অনিয়মের সত্যতা যাচাই এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখতে এসব কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। ভোটের দিন এবং ভোটের আগে ও পরে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার, প্রশাসনিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের আওতায় আসবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার থাকবে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণ করতে পারবেন। তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং নথিপত্র পর্যালোচনার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন ও গণভোটকে ঘিরে ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস জোরদার করতেই এই অনুসন্ধান ও বিচারিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচনে কঠোর নজরদারি আরোপের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলো মূলত ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদলে কাজ করে থাকে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ শুনানি, প্রাথমিক তদন্ত এবং প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে জরিমানা, কারাদণ্ড বা অন্যান্য আইনগত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে সব কার্যক্রম বিদ্যমান নির্বাচন আইন ও বিধিমালার আওতায় পরিচালিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে এসব কমিটির সক্রিয় উপস্থিতি নির্বাচনী অপরাধে জড়িতদের জন্য একটি নিরুৎসাহমূলক বার্তা হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে সাধারণ ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরিতে এ কমিটিগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপরও নজরদারি জোরদার করা হবে।
এদিকে প্রশাসনিক পর্যায়ে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটিগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে কিংবা নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করতে পারবে। এছাড়া গুরুতর অনিয়মের ঘটনায় কমিশনকে অবহিত করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের সুযোগ থাকবে।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি গঠনের ফলে নির্বাচন পরিচালনায় আইনি জবাবদিহি বাড়তে পারে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, দ্রুততা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে কমিটির কার্যপরিধি ও তৎপরতা আরও বাড়ানো হতে পারে। ভোটগ্রহণের দিনসহ পুরো নির্বাচনী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং অনিয়ম দমনে কমিশনের অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কমিটি কাজ করবে।