অর্থনীতি ডেস্ক
দীর্ঘ সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাবের মধ্যেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে বলে বিবেচনা করা হলেও বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজার থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতায় রয়েছেন। চলতি ডিসেম্বর মাসেও এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যা বাজারের জন্য উদ্বেগজনক হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতির চাপ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার এবং অর্থনীতির সার্বিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ খাত থেকে দূরে রাখছে। ফলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হিসেবে সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের দিকে ঝুঁকছেন।
সর্বশেষ বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী, অব্যাহত দরপতনের ধারাবাহিকতায় সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯০ পয়েন্টে নেমেছে। একই দিনে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ১ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূচকের সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণেও নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ৪৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার তুলনায় ৪৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরনের ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৬ পয়েন্ট কমেছে। এদিন লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
বাজার বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভালো-মন্দ নির্বিশেষে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এতে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, সেগুলোর বড় অংশ বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজারের সংস্কার ও নীতিগত উদ্যোগের দিকে নজর রাখছেন এবং দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১১ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে খোলা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ১৪টি কমেছে। একই সময়ে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় মোট বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৭৫২টি। বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে মোট বিও হিসাব রয়েছে ৪৩ হাজার ৫৪৫টি, যা মাসের শুরুতে ছিল ৪৩ হাজার ৫৫৯টি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। সে সময় বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি, যা এখন পর্যন্ত কমে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৭টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ ধারাবাহিক সরে যাওয়ার প্রবণতা দেশের শেয়ারবাজারে আস্থার ঘাটতির প্রতিফলন।
অন্যদিকে চলতি মাসে মোট বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭২১টিতে, যা মাসের শুরুতে ছিল ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৯টি। প্রতিদিন গড়ে ১৫৯টি নতুন বিও হিসাব যুক্ত হয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি চিত্র এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২৪ সালের শুরু থেকে শেয়ারবাজারে মোট বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০টি, যা বছরের শুরুতে ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি।
চলতি মাসে নারী ও পুরুষ উভয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেড়েছে। পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৪৪৯টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের ২৭৯টি। পাশাপাশি কোম্পানি পর্যায়ের বিও হিসাব ২৪টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৭২টিতে।
বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচার জন্য ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে যে হিসাব খুলেন, সেটিই বিও হিসাব নামে পরিচিত। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়। এ হিসাবের তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সিডিবিএল।