আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেছে। ভারতের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে নিয়ে এই উদ্বেগ জানানো হয় এবং ঢাকায় ভারতীয় মিশনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য বিনিময় করা হয়।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) এক নেতা সম্প্রতি প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী মন্তব্য করেছেন। ওই নেতা হুমকি উচ্চারণ করে বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো, যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত, ভারতের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মন্তব্যকে উসকানিমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করছে।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় ভারতীয় মিশনের চারপাশে নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা এবং কিছু চরমপন্থী কার্যক্রম বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ তদন্ত সম্পন্ন না করায় এবং ভারতকে পর্যাপ্ত তথ্য না দেয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বহু উন্নয়ন প্রকল্প এবং জনগণের মধ্যে সুসম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
‘সেভেন সিস্টার্স’ মন্তব্যকারী এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বিজয় দিবস উদযাপনের সময় এক সমাবেশে ওই বক্তব্য দেন। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সতর্কবার্তা প্রদান করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বহন করে।
এই পরিস্থিতির কারণে ভারতের আসাম রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চলাচলের ওপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বৃদ্ধির এই উদ্যোগ সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে নজরদারি ও প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা এবং দুই দেশের মধ্যে অব্যাহত শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। বাংলাদেশের সরকার নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের উদ্বেগ এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা ও কূটনৈতিক স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে যাতে সম্ভাব্য সংঘাত এড়িয়ে চলা যায় এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বজায় থাকে।