নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার সামনে একটি মালবোঝাই ট্রাক উল্টে যাওয়ার ঘটনায় এয়ারপোর্ট রোডের একটি লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার সকালে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার ফলে বনানীসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দীর্ঘ সময় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে উল্টে যাওয়া ট্রাকটি সরানো হলেও সকালজুড়ে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটের দিকে নিকুঞ্জ-১ এলাকার আউটগোয়িং লেনে একটি লোডেড ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটি সড়কের একাংশ দখল করে পড়ে থাকায় ওই লেনে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এয়ারপোর্ট রোডে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে পড়ে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাকটি দ্রুত সরানোর কার্যক্রম শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রাকটি সড়ক থেকে অপসারণ করা সম্ভব হয়। এ বিষয়ে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, উল্টে যাওয়া ট্রাক সরানো হয়েছে এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে ট্রাকটি সরানোর আগেই দুর্ঘটনার প্রভাব রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এয়ারপোর্ট রোড ধরে যানজট একদিকে বনানী পর্যন্ত এবং অন্যদিকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পাশাপাশি মাটিকাটা ফ্লাইওভার ব্যবহার করে যাওয়া মিরপুরমুখী সড়কেও চাপ সৃষ্টি হয় এবং যানজট ছড়িয়ে পড়ে কালশী এলাকা পর্যন্ত।
ভোরের দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটায় অফিসগামী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে গন্তব্যে পৌঁছান। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় যানবাহনে আটকে থেকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বাধ্য হন। বিশেষ করে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়িচালকদের জন্য পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত কঠিন।
ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনাস্থলটি রাজধানীর একটি ব্যস্ত সড়কের সংযোগস্থলের কাছে হওয়ায় অল্প সময়ের বিঘ্নও বড় আকারের যানজটে রূপ নেয়। সকালে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময় হওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল তুলনামূলক বেশি। ফলে একটি লেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ট্রাকটি ভারী মাল বোঝাই অবস্থায় ছিল। তবে দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারণা, চালকের অসাবধানতা, অতিরিক্ত গতি বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে।
রাজধানীতে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়, যা নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারী যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে পণ্যবাহী ট্রাক পরিচালনা এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় আরও সমন্বয় জোরদার করা গেলে এ ধরনের পরিস্থিতি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
ট্রাকটি সরানোর পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে সকালবেলার এই দুর্ঘটনা রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ভবিষ্যতে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম ও কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমন ভোগান্তি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।