1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক ও সচেষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফিং আয়োজন উপদেষ্টা পরিষদ গুম প্রতিরোধ, হাওর সংরক্ষণ ও সুইজারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফয়সালের সব ধরনের অপকর্মে বাবা-মার সম্পৃক্ততা স্বীকার বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন বন্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত আগামীকাল হওয়ার সম্ভাবনা গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা রবিউল হোসেন গ্রেপ্তার নবম পে-স্কেল প্রস্তাব: কমিশনের রিপোর্ট জমার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিশান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার জবাব দাখিলের তারিখ আগামী ১২ জানুয়ারি রইদ সিনেমা নিয়ে তিন বছর পর ফিরছেন মেজবাউর রহমান সুমন

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক, আট মাসে নিহত ৯৮

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৩ বার দেখা হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে এই মহাসড়কে ৬৫টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৯৮ জন নিহত এবং ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত ১৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি বর্তমানে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই মহাসড়কের ওপর সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বাঁশখালী, বান্দরবান, চকরিয়া ও কক্সবাজারসহ একাধিক জেলা ও উপজেলার মানুষ নির্ভরশীল। প্রতিদিন কর্মস্থলে যাতায়াত, চিকিৎসা গ্রহণ, পণ্য পরিবহন ও পর্যটন কার্যক্রমের জন্য হাজারো মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির প্রস্থ ও নকশাগত সীমাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, মহাসড়কের অধিকাংশ অংশে প্রস্থ মাত্র ১৮ থেকে ২২ ফুট। কার্যকর ডিভাইডার না থাকায় বিপরীতমুখী যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, অপর্যাপ্ত সাইনেজ ও অস্পষ্ট রোড মার্কিং। অনেক এলাকায় রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় দৃশ্যমানতা কমে যায়, যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত দুর্ঘটনার বড় অংশই হয়েছে মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যানবাহন খাদে পড়ে যাওয়ার কারণে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে, দুর্ঘটনার আগে অনেক ক্ষেত্রে বাস ও ট্রাকের অতিরিক্ত গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং এবং উল্টো পথে চলাচলের ঘটনা দেখা গেছে।

এই পরিস্থিতি জাতীয় পর্যায়ের সড়ক নিরাপত্তা সংকটেরই প্রতিফলন। বিভিন্ন সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা চার হাজারের বেশি ছিল, অন্য হিসাবে যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে। ওই বছর আহত হন পনেরো হাজারেরও বেশি মানুষ। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, উল্টো পথে চলাচল এবং যানবাহন খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে সারা দেশে ৫২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০৭ জন নিহত এবং ৮৯৯ জন আহত হন। একই সময়ে রেল ও নৌপথেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। এক মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ৫৭৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৫৫৩ জন।

নভেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার সবচেয়ে বেশি। এক মাসে ১৯৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০১ জন নিহত হন, যা মোট নিহতের প্রায় ৪১ শতাংশ। নিহতদের মধ্যে চালক ও পথচারীর পাশাপাশি নারী, শিশু, শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। পেশাগত দিক থেকেও চিকিৎসক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে অবৈধ ও ধীরগতির যানবাহনের চলাচল একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নিবন্ধনবিহীন ভ্যান, ইজিবাইক ও অটোরিকশা অনেক ক্ষেত্রে হেডলাইট বা রিফ্লেক্টর ছাড়াই চলাচল করছে। আইন অনুযায়ী এসব যানবাহনের মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পরিবহন মালিক বা কোম্পানির দায় নির্ধারণ করা হয় না। দীর্ঘসূত্রতা, সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে দুর্বলতা এবং প্রভাবশালী পক্ষের কারণে অনেক মামলার নিষ্পত্তি বিলম্বিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, এই মহাসড়কটি মূলত দুই লেনের হওয়ায় এবং ডিভাইডার না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবেই বেশি। দুই পাশে গাছপালা ও বাঁকের কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়। অবৈধ থ্রি-হুইলার ও হাটবাজারের কারণে পথচারী পারাপারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়ক প্রশস্তকরণ, বিভাজক স্থাপন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সংস্কার করা গেলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা–২০২৪ অনুযায়ী, প্রাইভেট কার ও বাসের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেলের জন্য ৬০ কিলোমিটার এবং পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য ৫০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন সীমিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

সড়ক নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে সম্প্রতি লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও চকরিয়া এলাকায় স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন। তারা ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণসহ দ্রুত উন্নয়নকাজ শুরুর দাবি জানান। সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, যানবাহনের ফিটনেস ও রুট পারমিটে স্বচ্ছতা, চালকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মঘণ্টা নিয়ন্ত্রণ, মালিকপক্ষের দায় নিশ্চিতকরণ এবং কঠোর আইন প্রয়োগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com