জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় অন্তত পাঁচটি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি তিনটি অস্ত্র তার পিতা হুমায়ুন কবিরের কাছে পাঠানো হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসা থেকে দুটি ম্যাগাজিন ও গুলির ব্যাগ উদ্ধার হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাচেষ্টার পর ফয়সাল আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় আসে। ব্যাগের মধ্যে অস্ত্র থাকার বিষয়টি তার পরিবারও জানত। অস্ত্রগুলো পরে বাবার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। রাতে তার স্ত্রী ও মায়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অস্ত্রগুলো নরসিংদীর গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। র্যাব ওই পুকুর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্তত একটি হত্যাচেষ্টায় ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ফয়সাল ও মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ ময়মনসিংহে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার স্বার্থে দুটি অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যান। বাকি তিনটি অস্ত্র ব্যাগে রেখে শ্যালক সিপুর মাধ্যমে বন্ধুর কাছে পাঠানো হয়। অস্ত্রগুলো পরে নরসিংদীর গ্রামের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, হামলায় ব্যবহৃত ভুয়া নম্বর প্লেটসহ মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়েছে। এটি আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির পার্কিং থেকে পাওয়া যায়। ভুয়া নম্বর প্লেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রথমে মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে আব্দুল হান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে, পরে তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তার হত্যাচেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ততা এখনও নিশ্চিত হয়নি। মোটরসাইকেলটির মালিকানা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। ওই সময় একটি মোটরসাইকেল থেকে তার ওপর গুলি চালানো হয়। পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। গ্রেপ্তার অভিযান চললেও সে ইতোমধ্যে দেশ ছাড়ে পালিয়েছে।
হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। এ তথ্য সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে জানান।
শরিফ ওসমান হাদির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার মস্তিষ্ক সচল রাখতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তবে অস্ত্রোপচারের আগে স্বাস্থ্য পুরোপুরি স্থিতিশীল হওয়া জরুরি। শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন করাই চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য। তার সব অঙ্গ সচল রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসা সিঙ্গাপুর বা যুক্তরাজ্যে হতে পারে।
এই ঘটনার পর রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তদন্ত সংস্থা হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর রয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেলের ফরেনসিক পরীক্ষা, মালিকানা শনাক্তকরণ এবং সম্ভাব্য সহায়ক চক্রের খোঁজ চলমান রয়েছে। হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।