আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মালয়েশিয়ার জোহর ও নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যে পৃথক দুটি সাঁড়াশি অভিযানে ৭২ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৪০২ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। বৈধ ভ্রমণ নথি ও কাজের অনুমতিপত্র ছাড়া বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত থাকার অভিযোগে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ ও এ সংক্রান্ত চক্র ভাঙতেই এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জোহর রাজ্যের জোহর বাহরু এলাকার তেব্রাউ শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত একটি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী কারখানায় অভিযান চালানো হয়। পরিকল্পিতভাবে অবৈধ প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ওই কারখানা থেকে ৩৫৬ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়, যাদের অধিকাংশই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে কাজ করছিলেন।
জোহর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক দাতুক মোহদ রুসদি মোহদ দারুস জানান, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা একেপিএসের সহযোগিতায় জোহর ইমিগ্রেশনের এনফোর্সমেন্ট শাখা এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় দেখা যায়, কারখানাটিতে বিপুলসংখ্যক বিদেশি শ্রমিক বৈধ ওয়ার্ক পারমিট বা ভ্রমণ নথি ছাড়া নিয়োজিত ছিলেন, যা মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন ও বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি আরও জানান, অভিযানের সময় কয়েকজন বিদেশি শ্রমিক কারখানা এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সব বহির্গমন পথ বন্ধ করে দেওয়ায় কেউ পালাতে সক্ষম হননি। অভিযানের অংশ হিসেবে তদন্তে সহায়তার জন্য কারখানাটির মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইজন স্থানীয় পুরুষ কর্মীকেও আটক করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জোহরের অভিযানে আটক ৩৫৬ জনের মধ্যে ২৯৯ জন মিয়ানমারের নাগরিক, ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন ভারতীয়, তিনজন ইন্দোনেশীয়, দুইজন নেপালি এবং একজন করে পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের নাগরিক রয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের বয়স ১৮ থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে। প্রাথমিক যাচাইয়ে তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে বৈধ ভিসা ও কাজের অনুমতিপত্র ছাড়াই কর্মরত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দাতুক মোহদ রুসদি বলেন, কারখানাটিতে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের একটি সুসংগঠিত কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ, প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আটক সবাইকে ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩ এবং ইমিগ্রেশন বিধিমালা ১৯৬৩-এর আওতায় সন্দেহভাজন হিসেবে সেলাঙ্গরের সেতিয়া ট্রপিকা ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে যারা আর্থিক লাভ অর্জন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। জোহরজুড়ে ধারাবাহিক ও সমন্বিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগচক্র চিহ্নিত করে ভেঙে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হবে। একই সঙ্গে বৈধ শ্রমবাজার রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এসব অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
এদিকে, জোহরের অভিযানের পাশাপাশি নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের নিলাই এলাকায় অবস্থিত একটি ইস্পাত কারখানায় পৃথক অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন বিভাগ। ওই অভিযানে ৪৬ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, আটক সবাই বাংলাদেশি নাগরিক এবং তারা বৈধ কাজের অনুমতিপত্র ছাড়াই কারখানাটিতে কর্মরত ছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পখাত ও নির্মাণখাতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে অবস্থান বা কাজ করলে অভিবাসীদের পাশাপাশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও দালালচক্রের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান আরও বিস্তৃত আকারে চালানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে।