নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জ শহরে নিয়মিত পুলিশি চেকপোস্ট চলাকালে একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি করে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের এক পিয়ন ও গাড়িচালকসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পুলিশ লাইন্স মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাতে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শহরের পুলিশ লাইন্স মোড়ে নিয়মিত চেকপোস্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-০৭-৬৮৪১) থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে গাড়ির ভেতরে থাকা একটি ব্যাগ ও দুটি খামের মধ্যে মোট ১০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়িতে থাকা একজন আরোহীর কথাবার্তায় অসংলগ্নতা লক্ষ্য করলে পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ আরও গভীর হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন—মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চর খসরু গ্রামের মৃত কালু মোল্যার ছেলে মোশারফ হোসেন (৬০) এবং শরীয়তপুর জেলার পালং থানার দক্ষিণ মধ্যপাড়া এলাকার মৃত সোহরাব ব্যাপারীর ছেলে মো. মনির হোসেন (৪০)। পুলিশ জানায়, মোশারফ হোসেন শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের একজন পিয়ন হিসেবে কর্মরত। অপর ব্যক্তি প্রাইভেট কারটির চালক ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোশারফ হোসেন পুলিশকে জানান, উদ্ধার করা টাকা তিনি গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি পুলিশের কাছে অস্পষ্ট ও সন্দেহজনক মনে হলে প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয় এবং দুইজনকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বুধবার রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার করা টাকার কোনো বৈধ উৎস বা সরকারি লেনদেনসংক্রান্ত কাগজপত্র আটক ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে বিষয়টি ঘুষ বা অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে টাকার উৎস, উদ্দেশ্য এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য অন্যান্য ব্যক্তির ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের একটি কাজের দরপত্র অনুমোদনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে উদ্ধার করা টাকার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তাঁদের দাবি, ওই টাকা গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশল কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে নিশ্চিত বক্তব্য দেওয়া হয়নি এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোপালগঞ্জ সড়ক সার্কেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক অবস্থান বা ব্যাখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আটক ব্যক্তিদের রিমান্ড আবেদন, প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নথিপত্র যাচাই করা হবে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে মামলায় নতুন আসামি যুক্ত করা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি কাজে দুর্নীতি বা অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পেলে তা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।