অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে দায়ের করা আবেদন বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনিভাবে লড়বে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এই তথ্য জানান। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন।
এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত ২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে এই আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে এবং ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ তদন্ত চালিয়েছে। এছাড়া, এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে ‘প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান’ পরিচালিত হয়েছে। আইনজীবীদের দাবি, এসব কারণে পরিবারের শত কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যদিও ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট হিসাব তারা উল্লেখ করেননি।
এই সালিশি মামলা ২০০৪ সালে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে এস আলমের পরিবার সিঙ্গাপুরে বসবাস করছে। তাদের অভিযোগ, ২০২০ সালে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
এস আলম পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত এবং ব্যবসায়িক সম্পদের ক্ষতি। তারা উল্লেখ করেছেন, এই ব্যবস্থা চলমান সরকারের অধীনে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এস আলম দাবি করেছেন তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। আমরা দেখাবো যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা মামলাটি আইন অনুযায়ী লড়ব।”
এই মামলার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ precedent তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মামলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক আদালতে দেশের অবস্থান প্রভাবিত হতে পারে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে আবেদন দাখিলের পর এখন পদ্ধতিগতভাবে দুই পক্ষের প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপন করার ধাপ শুরু হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই মামলাটি মোকাবিলার জন্য আইনগত প্রস্তুতি নিচ্ছে।