নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজধানীর হাজারীবাগে একটি নারী হোস্টেলের ঘর থেকে ধানমণ্ডি শাখার নারী নেত্রী জান্নাতারা রুমীর (৩২) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে জিগাতলা এলাকায় অবস্থিত ওই হোস্টেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
হাজারীবাগ থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পঞ্চম তলার কক্ষে রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। পরে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা অনুযায়ী, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হলেও তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত কারণ নির্ধারণ করা হবে।
হাজারীবাগ থানার ওসি (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও তদন্ত চলাকালে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।’
পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রুমী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি কিছু পোস্ট করেছিলেন। তার এক পোস্টে তিনি ওসমান হাদির উল্লেখ করেছেন এবং লিখেছেন, ‘ইয়া আল আল্লাহ, হাদিকে ভাইকে আমাদের খুব দরকার।’ এছাড়া একদিন আগে তিনি আরও একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘একদিন ভোর হবে, সবাই ডাকাডাকি করবে কিন্তু আমি উঠব না… কারণ আমি ভোরে উঠি না।’ এই পোস্টগুলো পুলিশের তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জান্নাতারা রুমী জাতীয় পার্টির (এনসিপি) ধানমণ্ডি শাখার সক্রিয় নারী নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্ব ও সংগঠনমূলক কর্মকাণ্ড স্থানীয় রাজনীতি ও নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তাকে সুপরিচিত করেছিল। রুমীর মৃত্যু স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহে স্থানীয়দের সাথে কথা বলছে। পাশাপাশি রুমীর নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। হোস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ এবং ঘরের পরিস্থিতি যাচাই করা হচ্ছে।
তদন্তে উঠে এসেছে যে, রুমী তার শেষ সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন। পুলিশ তার এই পোস্টগুলো এবং হোস্টেলের ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় যুব ও নারী নেতাদের নিরাপত্তা বিষয়ে পুনরায় নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পরই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং সম্ভাব্য অন্য কোনো প্রভাব নির্ধারণ করা হবে।
মূলত, জান্নাতারা রুমীর মৃত্যু ঢাকার নারী হোস্টেলগুলোর নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তদন্ত শেষে যা তথ্য পাওয়া যাবে, তা পরবর্তী নীতি প্রণয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে।