রাজনীতি ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা দুই ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারি বাসায় রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই তারা সরকারি বাসায় অবস্থান করছেন এবং দুই মাস পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ডে বাসায় থাকার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই।
গত ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই ছাত্র প্রতিনিধি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধান উপদেষ্টা তা গ্রহণ করেন এবং তখন জানানো হয়, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে। এর পরদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হয়।
আসিফ মাহমুদ ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে, মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট নিযুক্ত হন এবং প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তাকে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আসিফ মাহমুদ ১৫ মাস এবং মাহফুজ আলম ১৩ মাস উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল চলাকালীন দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই সময়ে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, যা প্রথমে ৬ আগস্ট নির্ধারিত থাকলেও একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির ঘোষণা আসে আসিফ মাহমুদের মাধ্যমে। এই কর্মসূচি সরকারের পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থানে তার কার্যক্রমকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।
আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফের স্থলাভিষিক্ত হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত হন। এরপর থেকে তিনি স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রথম অংশগ্রহণের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাহফুজ আলমকে তার সফরসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করেন। এ সফরের মাধ্যমে মাহফুজ আলমকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলজ্ঞ হিসেবে পরিচয় করানো হয়। এই পরিচয় দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কাল এবং পদত্যাগ প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দুই ছাত্র প্রতিনিধি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারি বাসায় অবস্থান করছেন।