রাজনীতি ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর রাজধানীসহ দেশজুড়ে সংঘটিত সহিংসতা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, কিছু পুরোনো চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এর আগে সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা রাত পৌনে ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শরিফ হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সব রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তুলেছে। তবে এই ধরনের সহিংসতা জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করছি।’
তিনি দেশের শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক জনগণকে আহ্বান জানান, ‘এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশকে ধ্বংস করতে দেওয়া যায় না। এই অপশক্তিকে রুখতে নৈরাজ্যবিরোধী সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। যে ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতীয় নির্বাচন অর্জন করেছি, তার ধারাবাহিকতায় আজ সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, শরিফ হাদি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিএনপি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, হাদির মৃত্যুর পর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। রাজধানীর ছায়ানট, উদীচী ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া ধানমন্ডি, উত্তরা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব ঘটনা প্রমাণ করে, পুরোনো একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তারা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সরকারের নাকের ডগাতেই এসব ঘটনা ঘটছে এবং জনগণ মনে করছে, সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।