জাতীয় ডেস্ক
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছেন, হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার জন্য দায়ীদের ন্যায়সঙ্গত বিচারের আওতায় আনা অপরিহার্য, যেখানে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।
ঘটনাটি ঘটে ১২ ডিসেম্বর, যখন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে নির্বাচনী প্রচারণার সময় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়, যেখানে ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি নির্বাচনী সময়সীমার মধ্যে সংঘটিত হওয়ায় এটি দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে, এমন সহিংসতা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা অপরিহার্য।
শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দেশে আনা হয়। ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। এছাড়া মরদেহের উপর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বাদ জোহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এই হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরুত্বকে সামনে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত না হলে রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা হয় এবং একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং ন্যায়সঙ্গত বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশের তৎপরতা ও তদন্ত কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্তে এবং প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া কেবল তার রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশ এবং রাজনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটি দেশের আইনি প্রক্রিয়া, বিচারব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতার পরীক্ষা হিসাবেও দেখা হচ্ছে। তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।