জামাল উদ্দীন; আইটি ফ্রিল্যান্সারদের টাকা আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধ চ্যানেলের পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে আসছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ব্যাংকিং জটিলতার কারণে এ খাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশাল সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।
এক হিসাবমতে, আইটি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা এখন ৬ লাখের বেশি। যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তরুণ প্রজন্ম এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকেই ঝুঁকছে। কোনো কোনো ফ্রিল্যান্সার মাসে ৩ থেকে ৬ লাখ বা তারও বেশি টাকা আয় করছে। এ টাকা দেশে আসার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ফলে, অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা দেশে আনেন। এ অর্থ বৈধ চ্যানেলে আনার কৌশল নিয়ে ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, এ জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ফ্রিল্যান্সারদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা হবে। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে মোট ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বের করা হবে এবং সরকার প্রদত্ত স্বীকৃতির মাধ্যমে এদের একই প্ল্যাটফরমে আনা হবে। সেই অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সারদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। এটি শেষ হতে আরো মাস দুই সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ডাটাবেজ তৈরির কাজ শেষ হলেই এদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন পেলে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আনতে অসুবিধে হবে না এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোও ফ্রিল্যান্সারদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী জানুয়ারিতেই আইটি ফ্রিল্যান্সারদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হবে। তখন তাদের আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
যদিও বাংলাদেশে দক্ষ ব্যক্তি মাত্রই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সকল শ্রেণির দক্ষতা মান সনদ প্রদান করবে। একই প্রক্রিয়ায় ফ্রিল্যান্সারদেরও সনদ দেওয়া হবে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) মো. ফারুক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, একই ফ্রেমওয়ার্কে এনে ফ্রিল্যান্সারদের সার্টিফিকেশনের আওতায় আনার কাজ চলছে। তবে তার আগ পর্যন্ত তারা যেভাবে কাজ করছে তার কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
ফিনান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন হলে ফ্রিল্যান্সিং খাতে বৈধভাবেই বিরাট অঙ্কের রেমিটেন্স দেশে আসবে। এখন নানাবিধ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। পাশাপাশি সরকারের কাছেও তাদের সঠিক হিসাব নেই। এই হিসাব না থাকায় সরকার আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ফ্রিল্যান্সারদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তাদের সনদ থাকলে ব্যাংক আর কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। জাতীয় অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রকৃত সুফল মেলবে তখন।