নিজস্ব প্রতিবেদক
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে দলটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রাশেদ খাঁন আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং এ বিষয়ে দলীয় সভাপতির কাছে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে রাশেদ খাঁন দলের সভাপতি নুরুল হক নূরের উদ্দেশে নিজের রাজনৈতিক পথচলা ও সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজপথের সহযোদ্ধা হিসেবে আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক যাত্রাপথে তার আচরণ বা বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে সেজন্য তিনি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সভাপতির সম্মতি পাওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতেও পারস্পরিক সম্পর্ক যেন মধুর ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অটুট থাকে—এমন প্রত্যাশার কথাও তুলে ধরেন রাশেদ খাঁন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পদত্যাগের পাশাপাশি তিনি দল ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য শুভকামনা, দোয়া ও ভালোবাসা জানিয়েছেন।
গণঅধিকার পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, রাশেদ খাঁনের পদত্যাগের বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচিত হয়েছে এবং সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিষয়টি গ্রহণ করা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা এখনো দেওয়া হয়নি। তবে দলীয় শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং যে কোনো নেতার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হয়।
রাশেদ খাঁন গণঅধিকার পরিষদের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে দল গঠনের পর বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং গণমাধ্যমে দলের অবস্থান তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তার পদত্যাগে দলটির নেতৃত্ব কাঠামোয় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, রাশেদ খাঁন ভবিষ্যতে নতুন রাজনৈতিক পথে যুক্ত হতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে রাশেদ খাঁন নিজে বা বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকেও এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলবদল বা নতুন জোটে যুক্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে গণঅধিকার পরিষদের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার পদত্যাগ দলটির ভবিষ্যৎ সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কৌশলে প্রভাব ফেলতে পারে। একই সঙ্গে রাশেদ খাঁনের পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেশের চলমান রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে, রাশেদ খাঁনের পদত্যাগ গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী দিনে তিনি কোন রাজনৈতিক পথে অগ্রসর হন এবং গণঅধিকার পরিষদ এই শূন্যতা কীভাবে পূরণ করে—সেদিকেই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের দৃষ্টি নিবদ্ধ।

