জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিএনপি ঝিনাইদহ-৪ আসনে তাকে দলীয় প্রতীক ধানের শীষে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দলটিতে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যোগদান অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপির সব নেতাকর্মীকে রাশেদ খাঁনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান এবং তাকে বিজয়ী করতে সাংগঠনিকভাবে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন।
দলে যোগ দেওয়ার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে তার রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে মনে করেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনে তারেক রহমানের নেতৃত্ব দেশ ও জনগণের জন্য প্রয়োজন এবং সে লক্ষ্যেই তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
এর আগে গণঅধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যেই তিনি গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে বিষয়টিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গণঅধিকার পরিষদের একটি অংশ তাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করে।
গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ বহিষ্কারাদেশের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, দলীয় নীতিমালা ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পদত্যাগপত্রে মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন গণঅধিকার পরিষদের নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন। তার আচরণ বা বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে সে জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি আরও লেখেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে সম্মতি দেওয়ায় তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতেও পারস্পরিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং দল ও নেতৃত্বের জন্য শুভকামনা জানান। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদান এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনে তাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। গণঅধিকার পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচিতি ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা নির্বাচনী মাঠে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের ভেতর এই পদত্যাগ ও বহিষ্কার নিয়ে বিভক্ত মতামত দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলেও, আবার একটি অংশ বিষয়টিকে দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শের প্রশ্ন হিসেবে তুলে ধরছে। এ নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
সামনে জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাশেদ খাঁনের বিএনপিতে যোগদান এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনে তার সম্ভাব্য প্রার্থিতা স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই রাজনৈতিক পরিবর্তন নির্বাচনী মাঠে কী ধরনের প্রভাব ফেলে।