অর্থনীতি ডেস্ক
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২০২১ সাল থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণে অব্যাহতভাবে মন্দাভাব দেখতে পাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের মাত্র ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
ডিএসইর তথ্যে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাস ভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ কোটি ডলার, যা গড়ে ২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার প্রতি মাসে। তবে, নভেম্বরের প্রথমার্ধে বিদেশিদের লেনদেন ছিল মাত্র ১ কোটি ডলার। সারা বছর মিলিয়ে বিদেশিরা মোট ৩১-৩২ কোটি ডলার লেনদেন করেছেন, যার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি প্রত্যাহারের পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এমএসসিআই ফ্রন্টিয়ার মার্কেট সূচকের দীর্ঘমেয়াদী শ্লথগতির কারণে বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য অঞ্চলের বাজারে অধিক লাভের আশা করছেন। এছাড়া, দেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, তারল্য ঝুঁকি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং পর্যাপ্ত গুণগত শেয়ারের অভাবও এই কম বিনিয়োগের পেছনে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২০ সালে, করোনাভাইরাস মহামারির পর পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে এই হার ধীরে ধীরে কমে যায়। ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৭ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ১ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বিদেশিদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে যথাক্রমে ০.৮৯% এবং ০.৭৭% হয়।
এদিকে, সার্বিকভাবে এই বছরের ১১ মাসে দেশের পুঁজিবাজারও হতাশাজনক ছিল। ডিএসইএক্স সূচক ২৩৭ পয়েন্ট কমেছে। সবচেয়ে বেশি দৈনিক গড় লেনদেন আগস্টে, ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছিল। সর্বনিম্ন দৈনিক গড় লেনদেন ছিল মার্চে, ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত নয় বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ডিএসইর মোট লেনদেনে অংশগ্রহণ কমে গিয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা একটি সতর্ক সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।