বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে “গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় মানসম্মত টেলিকম সেবার জন্য পর্যাপ্ত তরঙ্গ বরাদ্দে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে করণীয়” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জনাব জহিরুল হক। তিনি বলেন তরঙ্গের স্বল্পতা অপারেটরদের রয়েছে এ কথা স্বীকার করতেই হবে। উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন, ৩টি থালা দিয়ে ৫জন অতিথিকে খাওয়াতে গেলে যেমন সমস্যা হয় তেমনি স্বল্প তরঙ্গ দিয়ে সেবা দিতে গিয়ে গ্রাহকদের কাঙ্খিত সেবা দেয়াও সম্ভব না। তিনি আরো বলেন আমাদের দরজা সব সময় অপারেটরদের জন্য সব সময় খোলা। আসেন আলচনা করে সিধান্তে আশি যাতে স্পেকট্রাম অবিক্রিত না থাকে, গ্রাহক ভাল সেবা পায় এবং অপারেটররা স্পেকট্রাম কিনতে পারে।
তরঙ্গের দাম কমানো কমিশনের পক্ষে সম্ভব না এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তিনি আরো অধিকতর আলোচনার আহ্বান জানান। ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রয় মিত্র বলেন, কমিশন গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। আমরা চাই গ্রাহকরা তার কাঙ্খিত সেবা পাক অন্যদিকে অপারেটররাও যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকটাও আমরা লক্ষ্য রাখছি। তরঙ্গের স্বল্পতার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কমিশনার (এসএম) মোঃ আমিনুল হাসান বলেন, অপারেটররা ফ্রি তরঙ্গ চেয়ে আবেদন করে ছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনে যদি গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় ও শিক্ষর্থীদের স্বল্পমূল্যে সার্ভিস দেয়ার কথা উল্লেখ থাকতো তাহলে কমিশন অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে ভাবতো।
রবির সিইও মাহাতাব উদ্দিন বলেন কোয়ালিটি অফ সার্ভিস এর উন্নয়ন এর জন্য সরকার এবং অপারেটরদের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় প্রয়োজন সরকার আমাদেরকে স্পেকট্রাম মূল্য , ফাইবার মূল্য এবং কর নিয়ে সহায়তা দিলে আমরা তা গ্রাহকদের পৌঁছে দিতে পারব।
বিটিআরসির তরঙ্গ বিভাগের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, তরঙ্গের মূল্য আমরা বৃদ্ধি করি নাই। এটি অপারেটরদের নিলামের প্রতিযোগিতার কারণেই বেড়েছে। আমরাও তরঙ্গকে সকলের জন্য ব্যববার উপযোগী ও সহনীয় মূল্য নির্ধারণের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু তরঙ্গের মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। টেলিকম বিশেষজ্ঞ টি. আই. এম নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অব্যবহৃত তরঙ্গের মূল্য শূণ্য। তাই তরঙ্গকে অপারেটরদের সামর্থ অনুযায়ী বন্টন করলে গ্রাহক ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে।বিটিআরসি’র ডেপুটি ডিরেক্টর (এসএম) মোঃ সোহেল রানা বলেন, তরঙ্গের স্বল্পতার কারণে বিটিএস নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার চীনাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি সুপারিশ করেন অপারেটরদের সামর্থ বিবেচনা করে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এতে করে গ্রাহকরা তার কাঙ্খিত সেবা পাবে। ৫জি কমিটির সদস্য আইবিএর এসোসিয়েট প্রফেসর খালেদ মাহমুদ বলেন, আগামীতে ৫জি প্রযুক্তি দেশে আসছে। তার জন্য আমরা কাজ করছি। নতুন ব্র্যান্ডের তরঙ্গ এখনও নির্ধারণ করা হয় নাই। বর্তমানে যে পরিমাণ গ্রহক তাদের জন্য ব্যবহৃত তরঙ্গের পরিমাণ খুবই কম। তাই মানসম্মত সেবা দিতে গেলে অধিক তরঙ্গ ব্যবহারের বিকল্প নাই। জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকার চাইলে তরঙ্গের দাম কমাতে পারে। দৈনিক সমকালের সি: স্টাফ রিপোর্টার রাশেদ মেহেদী বলেন, কমিশন ব্যবসা করে। কমিশনকে রাজস্ব সংগ্রহের দিক থেকে বের হয়ে এসে গ্রহকদের সেবার দিকে মনোযুগী হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। গ্রাহক স্বার্থে বিনামূল্যে করোনা মহামারীতে অপারেটরদেরকে দেয়ার জন্য সুপারিশ জানাচ্ছি।
আরো বক্তব্য রাখেন, বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিস এর মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহফুজ করিম, বাংলালিংকের চীফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তৈমুর রহমান, এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার আব্দুস সালাম, অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের সাবেক ডিরেক্টর ড. কামরুজ্জামান, টেলিকম বিশেষজ্ঞ ইঞ্জি: আবু সালেহ। আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান,বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু ।
সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ। আলোচনা শুরুতে তিনি একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।