ঢাকা: চলমান বিশ্বে যে জায়গায় উন্নত প্রযুক্তিগুলো আছে সে জায়গায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নিয়ে যেতে চান কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। তিনি বলেছেন, আমাদের টার্গেট নিয়েই চলবো। পাশাপাশি অনিয়ম দূর করতে কাজ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে বিটিআরসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান।
আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রশ্নে শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসিকে যে অবস্থায় পেয়েছি সেখান থেকে শুরু করতে চাইছি এবং চলমান বিশ্বে যে জায়গায় উন্নত প্রযুক্তিগুলো আছে সে জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। আমাদের টার্গেট নিয়েই চলবো।
উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে মনিটরিং অপারেটরদের কাছে স্পেকট্রাম পর্যাপ্ত না থাকার কারণে উন্নত গ্রাহক সেবা দেওয়া হচ্ছে না- এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, স্পেকট্রামের ঘাটতি একটি ফ্যাক্টর, আরও ফ্যাক্টর আছে।
তিনি বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে এটা গাইডলাইন রয়েছে। সে গাইডলাইনে কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। সে জায়গাটা রিপেয়ার করতে হবে। পাশাপাশি উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্পেকট্রাম কিনতে উৎসাহিত করতে হবে। সে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অচিরেই আরও কিছু স্পেকট্রাম দিতে পারবো। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিছু দিন আগে রবির কাছে স্পেকট্রাম নবায়ন করে দিয়েছি।
উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার জন্য মনিটরিং সিস্টেম লাগবে জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা এ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সিরিয়াসলি কাজ করছি।
গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় কি কি উদ্যেগে নেওয়া হবে জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, আমাদের বিধিবিধানে যা আছে তা বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
টেলিকম খাতের যারা স্টেকহোল্ডার আছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সামাধান করা, এ খাতে যারা ব্যবহারকারী আছেন তাদের অসুবিধা দূর করা এবং বিটিআরসির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাওয়া মূল চ্যালেঞ্চ বলে মনে করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি দিয়ে কোয়ালিটি নিশ্চিতে ১২ হাজার কিলোমিটার ৬ মাস ধরে ড্রাইভ টেস্ট করা হবে। প্রতি বিভাগে এ টেস্ট করা হবে। প্রতিমাসে যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে তা অপারেটরদের জানানো হবে।
ড্রাইভ টেস্টের তথ্য জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, খারাপ, সার্ভিস কোয়ালিটি খারাপ, একেবারে সত্য কথা বলি সার্ভিস কোয়ালিটি খারাপ এটা আসছে রিপোর্টে।
তিনি বলেন, আমাদের মোবাইল অপারেটরদের সার্ভিস কেন স্যাটিসফেকটরি না এটার কিছু কারণ আছে। একটা কারণ হচ্ছে স্পেকট্রাম। বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়ন গ্রাহকের জন্য দশমিক ৮২ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার হয় অথচ অস্ট্রেলিয়াতে এটার পরিমাণ ১২ দশমিক তিন শূন্য মেগাহার্টজ। কাজেই আমাদের এখানে স্পিড কম হওয়ার বড় কারণ। আরও অনেক বিষয়ে কানেকটিভিতে ত্রুটি আছে। আইএসপি লাইসেন্স হোল্ডাররা নির্ধারিত নীতিমালায় সেবা দেওয়ার কথা সেটা কিন্তু তারা শেয়ারিং করে দিচ্ছে এজন্য ইন্টারনেট স্পিড কম হয়। আমাদের জনবল ঘাটতি আছে টেকনিক্যালি আমাদের সক্ষমতারও কিছু ঘাটতি আছে যা অচিরেই পূরণ করতে পারবো।
তিনি বলেন, অনিয়মকে রেগুলেট করবো কিন্তু বিজনেস সেক্টরকে ফ্যাসিলেটেড করব এবং নিয়মের মধ্যে দিয়ে সবকিছু চলবে। এভাবে চলতে চলতে ডিজিটালি উন্নত দেশের কাতারে যেতে চেষ্টা করব।
৫-জি নীতিমালা চূড়ান্ত
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ৫-জি নিয়ে কয়েকটি টিম কাজ করছে, কয়েকটি টিম নিয়ে এ কাজ করা হচ্ছে। আমাদের ফোরজি সারাদেশে না হলেও ৫-জিতে যেতে চাই। একটি ধাপ থাকতেও আরেকটি ধাপে যেতে চাই। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ৫-জি সেবা শুরু করতে চাই।
৫-জির জন্য অপারেটরদের জন্য নতুন তরঙ্গ বরাদ্দের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান বিটিআরসি প্রধান।
কোন কোন অপারেটর তরঙ্গ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে প্রশ্নে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, খুব শিগগিরই জানাতে পারবো কাকে কত তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া যাবে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি জানানো যাবে।
অডিট প্রসঙ্গ
নিরীক্ষা নিয়ে গ্রামীণফোন ও রবির সঙ্গে টানাপোড়েন কোন অবস্থানে আছে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, নিরীক্ষার বিষয়ে আদালতে মামলা আছে, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও টাকাও যাতে দ্রুত আদায় করা যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিরীক্ষা একটি দীর্ঘ মেয়াদি ইস্যু। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারবো।
ভয়েস কলের মূল্য প্রসঙ্গ
ভয়েস কলের মূল্যে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, কল রেটের পরিবর্তনের বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাবে না। এ বিষয়ে কাজ চলছে।