সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের সিইপিজেডে প্রতিষ্ঠা করে মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড; যা ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে নিবন্ধন পায়। তবে বন্ড সুবিধা পেলেও তার সঠিক ব্যবহার করেনি প্রতিষ্ঠানটি। যাত্রার পর শুরু করে জাল-জালিয়াতি। একের পর এক ভুয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেম (ইএক্সপি) উপস্থাপন করে দিতে থাকে রাজস্ব ফাঁকি। এ পর্যন্ত ৩৮১টি ভুয়া ইএক্সপি ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মাধ্যমে ৫৫৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি মালিকানা শেয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে ‘বি’ ক্যাটেগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে পরিবর্তিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর সাময়িক বন্ড রেজিস্ট্রেশন নং-১৭৩/২০০৪ দেয়া হয়। তারপর ২৮ ডিসেম্বর ২০০৪ প্রতিষ্ঠানটিকে স্থায়ী বন্ড লাইসেন্স দেয় চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বার্ষিক নিরীক্ষাও সম্পন্ন করেনি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও করানো যায়নি কোনো অডিট। তারা উপস্থাপন করেনি কোনো কাগজপত্র। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি তথ্য প্রেরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংক থেকেও কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। ওই ব্যাংক বরাবর একাধিবার চিঠি দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি বন্ড কমিশনারেটকে।
এদিকে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি সিইপিজেড থেকে কর্ণফুলী ইপিজেডে বরাদ্দ প্লটে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া না পর্যন্ত কর্ণফুলী ইপিজেডে অবস্থিত তাদের অন্য প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই অ্যাপারেলস মিলিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানে পণ্য সংরক্ষণের জন্য আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট নিরীক্ষা-সংক্রান্ত সব দলিলপত্র দাখিল করে দুই মাসের মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে এমন শর্তে অনুমোদন দেয় প্রতিষ্ঠানটিকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীকালে কোনো চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়নি, এমনকি কর্ণফুলী ইপিজেডে মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড নামে কোনো প্রতিষ্ঠানও নির্মাণ করেনি।
ফলে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেপজা তথ্য, সিআইএস থেকে আমদানি-রপ্তানি তথ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট তথ্য নিয়ে তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। সেই কমিটি চট্টগ্রাম কন্ড কমিশনারেটকে জানায়, অ্যাসায়কুডা ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ কাস্টমসের ডেটাবেজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পিআরসি ডেটাবেজ যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ৩৫৮টি ইএক্সপির কোনো তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাওয়া যায়নি এবং ৩৪টি ইএক্সপি অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যুকৃত। এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিষ্ঠানটি ৩৮১টি ইএক্সপি’র মাধ্যমে অবৈধভাবে পণ্য অপসারণ করেছে। ওই কমিটি আরও বলে, ভুয়া ইএক্সপি ব্যবহার হবে অবৈধভাবে অপসারণকৃত পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৪৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৪ টাকা, যার সঙ্গে জড়িত রাজস্ব ৫৫৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮১ টাকা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মেসার্স ওয়ার্ল্ড ই ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড ভুয়া ইএক্সপি ব্যবহার করে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালার পালনীয় শর্তাবলি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে; যা শাস্তিমূলক অপরাধ ও লাইসেন্স বালিতযোগ্য। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৫৫৫ কোটি টাকা রাজস্ব-সংক্রান্ত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে লিখিত জবাবে উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় সরকারি রাজস্ব সংরক্ষণ ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রাজস্ব ফাঁকির মামলাটি এক তরফা নিষ্পত্তি করা হবে।’