অদ্ভুত এক রাত গেল মোস্তাফিজুর রহমানের। নিজেদের আগের দুই ম্যাচে ভালো বোলিং করলেন, দল জিততে পারেনি। আজ ওয়াংখেড়ে মার খেয়ে ভূত হলেন, কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস পেল ৪৬ রানের বড় জয়। দলের জয়ে মোস্তাফিজ খুশি হবেন, নাকি ব্যক্তিগত ব্যর্থতায় মন খারাপ করবেন!
২১৪ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে ওপেন করতে নামলেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দুজনের উদ্বোধনী জুটি ৪ ওভারে রান তুলে ফেললে ৪০। দারুণ শুরুর পর বেঙ্গালুরু যখন আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, তখন তাদের লাগাম টেনে ধরলেন ম্যাকক্লেনহান। পঞ্চম ওভারে ৩ বলের মধ্যে বেঙ্গালুরুর দুই প্রোটিয়া তারকা ডি কক ও এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে মুম্বাইকে ম্যাচে ফেরালেন ম্যাকক্লেনহান। মনদীপ সিংকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে (৩৩) ধাক্কাটা সামলানোর চেষ্টা করলেন কোহলি। কিন্তু সেটিও বিফলে গেছে ক্রুনাল পান্ডিয়ার ঘূর্ণিতে, দশম ওভারে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন মনদীপ আর কোরি অ্যান্ডারসনকে। ম্যাচটা যে বেঙ্গালুরুর হাতে আর নেই, ওই ওভারে যেন সেটি স্পষ্ট হয়ে গেল।
কোহলি শেষ পর্যন্ত ছিলেন বটে। তবে এদিন তিনি আর রান তাড়া করার রাজা হয়ে নন, খেলেছেন যেন পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে। বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, এক প্রান্তে যেভাবে সতীর্থরা আসা-যাওয়া করছেন, এ ম্যাচে তাঁর বেশি কিছু করার নেই। তবুও খেলে গেলেন; ৬২ বলে ৯২ রান করে অপরাজিত রইলেন। কোহলির ইনিংসটা দারুণ বলা যায়, কিন্তু লড়াকু বলা যায় না। এটাই অবাক করার, কোহলি উইকেটে রইলেন, বেঙ্গালুরু অলআউটও হয়নি, তবুও অসহায় চোখে দেখলেন দলের বড় পরাজয়।
আরও অবাক করার মতো যে মোস্তাফিজ আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন, তাঁকে আজ খুঁজেই পাওয়া গেল না। মুম্বাইয়ের প্রায় প্রতিটি বোলার যেখানে বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছেন, সেখানে তিনি উদার হাতে রান বিলিয়েছেন। বলে কোনো বিষ নেই, বৈচিত্র্য নেই, একঘেয়েমি বোলিং করে যাচ্ছেন একটার পর একটা। বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানরা তাঁর সতীর্থ বোলারদের সমীহ করলেও মোস্তাফিজকে মনের সুখ মিটিয়ে পিটিয়ে গেলেন। প্রথম ওভারে ১৩, দ্বিতীয় ওভারে ১১, তৃতীয় ওভারে ১৩, শেষ ওভারে ১৮। ৪ ওভারে ১৩.৭৫ ইকোনমিতে ৫৫ রানে উইকেটশূন্য, এত বাজে বোলিং মোস্তাফিজ তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই আগে কখনো করেননি।
বাজে বোলিংয়ে মোস্তাফিজের মন খারাপ হতে পারে। তবে অবশেষে হাসতে পারলেন রোহিত শর্মা। টানা তিন ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে মুম্বাই। রোহিত আজ হাসতেই পারেন। আর এ জয়ে যে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন মুম্বাই অধিনায়ক। উমেশ যাদবের করা প্রথম ওভারের প্রথম দুই বলে নেই মুম্বাইয়ের ২ উইকেট। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ২ উইকেট হারানোর পরও এভিন লুইসকে সঙ্গে নিয়ে রোহিত যে পাল্টা আক্রমণটা করলেন, অবিশ্বাস্য! ৪২ বলে ৬৫ করে লুইস আউট হলেও রোহিত বেঙ্গালুরুর বোলারদের দুদ্দাড় পিটিয়েছেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। একটু আফসোস হতে পারে তাঁর ১৯.৫ ওভারে যখন ফিরেছেন, নামের পাশে ৯৪ রান। সেঞ্চুরি হাতছাড়ার সেই আফসোস রোহিতের দূর হয়ে যাওয়ার কথা বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে।