মাহে রমজানের প্রথম দিনেই রাজধানীতে অনেক বাসায় জ্বলেনি চুলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রান্নাঘরে কাটিয়েও প্রয়োজনীয় রান্নাটা সারতে হিমশিম খেয়েছেন গৃহিণীরা। কারণ, সরবরাহ লাইনে গ্যাসের সংকট।
হঠাৎ করে কেন গ্যাসের এই সমস্যা- সেই প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে উদ্বেগ আর সমালোচনার মাত্রা বাড়তে থাকে। অবশেষে সমস্যাটার নেপথ্য কারণ জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, ১০ এপ্রিলের আগে সংকট কাটবে না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তানজিল জানান, তার বাসায় সকাল ৮টার দিকে গ্যাস চলে যায়। আসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আজিমপুরের শেখসাহেব বাজার এলাকার বাসিন্দা সোহানী শিফা জানান, সকাল ৯টার দিকে গ্যাস চলে যায়। গ্যাস আসেনি এখনও। বাধ্য হয়ে তাই ইনডাকশনে রান্না করতে হয়েছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর রমজানে গ্যাসের অবস্থা খারাপ ছিল। ইফতারের সময় গ্যাস প্রায় সমস্যা করত। তাই গতকাল আগের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ইনডাকশন ওভেন কিনেছিলাম। আজকেই কাজে লেগে গেল।
দিনভর ভোগান্তি শেষে রোববার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে হঠাৎ করে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সারা দেশ, বিশেষত রাজধানীর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়। শেভরন পরিচালিত এই গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা অন্যতম। সেই ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগানের সংকট তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। সংকট কাটিয়ে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র জানায়, বিবিয়ানার ছয়টি কূপ থেকে শনিবার রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে গ্যাস উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। এর প্রভাব পড়ে সরবরাহ ব্যবস্থায়।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রমজান মাসের প্রথম দিনেই গ্যাস সরবরাহে সংকট তৈরি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা আর ক্ষোভের ঝড় বইছে। আর সেই ক্ষোভ তারা উগরে দিচ্ছেন অনলাইনে। রওশন আরা মুক্তা নামে এক গৃহিণী লেখেন- ‘গ্যাস নাই। তবু ভাগ্য কত ভালো, পানি আছে!’ রামপুরার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আরেক গৃহিণী লেখেন, ‘আমাদের চুলা ১০০ ভাগ বন্ধ। ইফতার তো হলোই না, সেহরির কী হবে তা নিয়ে আমার শাশুড়ি চিন্তায় অস্থির।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রোমেন রায়হান বলেন, ‘খাইবো ডিম ও খাইবো মুলা; পেটের গ্যাসে জ্বালব চুলা।’