1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ

এমপি-নেতা দূরত্বে কোন্দল তৃণমূলে

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ১০০ বার দেখা হয়েছে

আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন এবং চলতি বছরের শেষে দলীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। এ দুটি বিষয় সামনে রেখে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বিশেষ করে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলীয় সম্মেলন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে দলীয়প্রধানের। কেন্দ্রের আগে তৃণমূলে সম্মেলন শেষ করতে হবে। কিন্তু জেলায় জেলায় স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে দলীয় নেতাদের দূরত্বে বিরাজমান অস্থিরতায় তৃণমূল সম্মেলনে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এই দূরত্ব না কমলে কেন্দ্রের আগে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করা যাবে কি না- এ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেক কেন্দ্রীয় নেতার।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপিদের নিয়ে বৈঠককালে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দূরত্ব কমানোর নির্দেশনা দেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনমুখী করার কথাও বলেন তিনি। জানা গেছে, তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালীকরণ ও সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনার জন্য ৮ বিভাগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কয়েক মাস ধরে কাজ করছেন তারা। রাজশাহী বিভাগে সব সাংগঠনিক জেলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৬টি উপজেলা ছাড়া বাকি সব উপজেলার সম্মেলনও হয়েছে।

কিন্তু অন্য ৭ বিভাগে বর্ধিত সভা, প্রতিনিধিসভা হলেও সম্মেলন হয়নি অধিকাংশ জেলা ও উপজেলায়। রমজানের পর দ্রুতই সম্মেলন হয়ে যাবে বলে আশ^াস সংশ্লিষ্ট নেতাদের।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমি আমার বিভাগের সব সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করেছি। ৬৬টি উপজেলার সম্মেলন করেছি, বাকি আছে ১৬টি। রমজানের পর এগুলোও শেষ করব।

সম্মেলন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু-একটি জায়গায় সমস্যা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং এই বিভাগের দায়িত্বরত সাংগঠনিক টিমের সবাই সহযোগিতা করায় সমস্যা মোকাবিলা করেই সফল হয়েছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে সম্মেলনের পর থেকেই জটিলতা ছিল। এই দুটি বিভাগের বেশকিছু জায়গায় দলীয় এমপি এবং স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব ছিল। ফলে একপর্যায়ে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে সরিয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সিলেট বিভাগ থেকে সাখাওয়াত হোসেন শফিককে সরিয়ে আহমদ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর মতবিনিময় ও বর্ধিত সভা বা কর্মিসভা হলেও সম্মেলন হয়নি বিভাগ দুটিতে। এর মূলে রয়েছে স্থানীয় এমপির সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব।

এ ছাড়া বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দূরত্বও আছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নোয়াখালীতে। কয়েক বছর ধরে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব চলছে। একাধিকবার দলীয় হাইকমান্ড থেকে হুশিয়ার করলেও একরামুল করিম তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। অন্যদিকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু দেশের নানা ইস্যুতে বিতর্কিত বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন, যা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী।

জটিল অবস্থা ফেনীতেও। নিজাম হাজারী এমপির সঙ্গেও স্থানীয় নেতাদের দূরত্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে গত বুধবার নিজাম হাজারীর এমপি পদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফের রিট করেছেন এক যুবলীগ নেতা। চাঁদপুরেও সদরসহ অন্তত দুটি আসনের এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দূরত্ব রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কুমিল্লা জেলা উত্তর ও দক্ষিণ, হাতিয়াসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব দৃশ্যমান। ফলে সেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন  বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে তৃণমূলের সম্মেলন চলছে। কোথাও কোথাও প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি, ঈদের পর চট্টগ্রাম বিভাগে ব্যাপকহারে সম্মেলন হবে। আমরা নিচ থেকে ওপরের দিকে সম্মেলন করছি, ফলে আমাদের সময় লাগবে। তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের ইউনিট পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে নেতাদের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। দক্ষিণের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সম্মেলনের ধীরগতির অন্যতম কারণ। তবে সম্মেলন কার্যক্রম নভেম্বরের আগেই মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।

ঢাকা বিভাগের মাদারীপুরের সব এমপির সঙ্গেই স্থানীয় নেতাদের কোন্দল রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি, যুবলীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাফরউল্লাহর বিরোধ অনেক দিনের। শরীয়তপুরের একজন এমপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার বিরোধ চরমে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুরসহ বেশকিছুু জায়গায় এমপির সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের কোন্দল রয়েছে। তৃণমূল সম্মেলনে এর দৃশ্যত প্রভাব রয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা, নেত্রকোনা, শেরপুরে দলীয় কোন্দল রয়েছে। এ বিভাগে জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন হয়নি। এখন পর্যন্ত ১২টি উপজেলার সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলো জুন-জুলাইয়ের মধ্যে হয়ে যাবে বলে মনে করেন ময়মনসিংহ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে আমরা জেলার সম্মেলনে হাত দেব। আমাদের হুমওয়ার্ক করা আছে। পর্যায়ক্রমে সম্মেলনগুলোর কাজ করে যাব। স্থানীয় দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করতে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলে এসব দ্বন্দ্ব থাকে। আমরা দেখেছি অনেক জায়গায় ২০ বছর, ২৫ বছর আগের কমিটি রয়েছে। সেগুলোর কাজ করছি। আশা করছি, যথাসময়ে সম্মেলনের কাজ শেষ হবে।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগে প্রভাবশালী স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা থাকায় এখানে সাংগঠনিক কাজ অনেকটাই জটিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। খুলনা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, খুলনা বিভাগে ৪টি জেলা ও ৪টি উপজেলা বাকি আছে। রমজানের পর এগুলোর কাজ দ্রুত হয়ে যাবে। বরিশাল বিভাগে ৮টি উপজেলা ও ৩টি জেলার সম্মেলন বাকি আছে বলে জানান খুলনা ও বরিশাল বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। তৃণমূল আওয়ামী লীগের পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা যেটিকে কোন্দল বলছেন, আমরা সেটাকে বলছি মতবিরোধ বা মতভেদ। এত বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে এই মতভেদ থাকবেই। কারণ, এক একটা এলাকায় আমাদের দলের অনেক যোগ্য লোক আছে। সেখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে এই মতবিরোধ গড়ে ওঠে। তবে এসব কমানোর জন্য সদস্য নবায়ন বা সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলা ও মহানগরের এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব চরমে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্কোন্দল রয়েছে; যা দূর না করে সম্মেলনের দিকে গেলে পরিস্থিতি সহিংসতা পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com