1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হঠাৎ অসুস্থ শহীদ শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ পৌঁছেছে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ শরীফ ওসমান হাদির দাফন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে শহীদ ওসমান হাদির জানাজার নামাজ পরিচালনা করবেন হাদির বড় ভাই আবু বকর ময়মনসিংহে গণপিটুনিতে নিহত যুবকের ঘটনায় র‍্যাব গ্রেপ্তার সাতজন উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)-২০২৫ পুনঃপর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ট্রাফিক নির্দেশনা জারি হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ, স্বাধীন তদন্তের আহ্বান শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ, বিএনপির উদ্বেগ

ব্যাংক খাতে বাড়ছে অনিয়ম

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২
  • ১১৯ বার দেখা হয়েছে

এদিকে বর্তমান ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধেও প্রভাব খাটিয়ে থার্মেক্সসহ বিতর্কিত সব প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফসহ আরো বেশি ঋণ প্রদানে সরাসরি নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেলেঙ্কারিতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সমালোচিত ব্যক্তি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে টানা ১৭ বছর মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) দায়িত্বে থাকাকালে তার নামে অর্থপাচারেরও অভিযোগ ছিল।

পরে ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সমালোচনার মুখে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রংপুর অফিসে বদলি করা হয়। তবে মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে আবারো ফিরে আসেন একই বিভাগে। পরের বছরই পদোন্নতি পেয়ে হয়ে যান ডেপুটি গভর্নর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন ঘটনায় দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা হয়েছে বলে মনে করেন আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা। ফলে গত দুই তিন বছরে ব্যাংক খাতে একের পর এক অনিয়ম ঘটে চলেছে। ব্যাংক খাতের এসব অনিয়ম প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যর্থ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে নেয়া হচ্ছে একের পর এক আইনি প্রক্রিয়া।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে মামলা ও আদালতের নির্দেশে কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে আর্থিক খাতের দুর্নীতিবাজদের। ২০২১ সালের জুনে এবি ব্যাংকের সাবেক ১৬ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এসব কর্মকর্তারা অফিসের অনুমোদন ছাড়াই সই জাল করে ছয়টি ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার ও সাতটি অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ ঋণ নিয়ে পরে তা আত্মসাৎ করেন।

আবার রেলওয়ের জমিকে বন্ধক দেখিয়ে ১৮৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম ফরিদ উদ্দিন ও ছয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

গত নভেম্বরে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতে সোনালী ব্যাংক নোয়াখালী সোনাগাজী শাখার তিন কর্মকর্তাকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। একই সাথে প্রত্যেককে ২৫ লাখ করে মোট ৭৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেও এমন ঘটনা অহরহ।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের এক কোটি ৪২ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১১ জনকে তিন থেকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রাহকদের প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং আরো এক কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে ব্যাংক এশিয়ার দিলকুশা শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) সিলভিয়া আক্তার রিনিকে (৪৩) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

পরের মাসেই (২৩ মার্চ) মিজানুর রহমান সিদ্দিক নামে এক গ্রাহকের সাড়ে ২২ লাখ টাকা আত্মসাতে নূর মোহাম্মদ বাশার নামে ইসলামী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর রায়পুর শাখার এক কর্মকর্তাকে ২৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে নোয়াখালীর জেলা আদালত।

যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, কিন্তু এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা এককভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদাসীনতায় দুর্নীতিগ্রস্তরা ব্যাংকের ক্ষমতা পেয়ে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগের বিষয়ে দৈনিক আমার সংবাদ থেকে জানতে চাওয়া হয় মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের কাছে।

তিনি বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেবে আদালত, এখানে আমাদের করণীয় নেই। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি যেন ব্যাংকিং খাত সুস্থ থাকে, দেশের অর্থনীতি ভালো থাকে। সরকার যে লক্ষ্য দিয়েছে, সে লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত সচেতন। এক্ষেত্রে নিরলসভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’ দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যর্থ হলেও দুদকসহ অন্যান্য সংস্থার মামলায় তারা কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দণ্ডিত হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফেলতি ছিল কি-না, এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে কারাদণ্ড দিতে পারে না। আমরা দেখতে পারি কেউ ঋণ নিতে অনিয়ম করেছে কি-না, কেউ খেলাপি হয়েছে কি-না এসব। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আমরা নির্দেশনা দেই, সরাসরি হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু নির্দেশনার পরও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেয়।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন ব্যর্থতার কারণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ‘ব্যাংকিং খাত তদারকি ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সুদৃষ্টিতে থেকে চাকরির মেয়াদ শেষে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগের আশায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাংশ প্রভাবশালীদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ছাড়া পদোন্নতির জন্য একজন কর্মকর্তাকে কাজের মূল্যায়নে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে উচ্চ নম্বর পেতে হয়।

ফলে তার সুনজরে থাকার জন্য অনৈতিক আরোপিত সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা মেনে নিতে বাধ্য হন অনেকে। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে হূদ্যতা বা স্বজনপ্রীতির কারণেও অনেক ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকে অবসরের পরপরই যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি করতেন, সেখানে উচ্চ পদে যোগ দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাদের এমন অনৈতিক কাজের কারণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বার্ষিক সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্বাচনের কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পূর্বনির্ধারিত থাকে। একক পরিবারের পরিচালক সীমা লঙ্ঘন করে একাধিক ব্যাংকে একই পরিবারের চারের অধিক পরিচালক নিয়োগ করা হয়। পরিচালক থেকে ব্যাংক বা ব্যবস্থাপনায় পেশাগতভাবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক ব্যাংকে ব্যক্তি সম্পর্কের ভিত্তিতে অনভিজ্ঞ পরিচালক নিয়োগ করা হয়।

এছাড়া আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক ঋণ খেলাপি পরিচালক বিদ্যমান থাকার নজির থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এমন প্রতিবেদনের পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমস্যা উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। ফলে ব্যাংক খাতের অনিয়মে ঘটনায় সরকারের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদ  বলেন, ‘বড় কোনো লোন দিতে বা কাউকে ঋণ ছাড় দিতে সিদ্ধান্তগুলো এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক নেয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব জায়গায় সরকারের আজ্ঞাবহ লোক বসানো, তাই তারা স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে না। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংকের বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়েছে সরকারের অনুমোদন নিয়ে।’

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কোনো দুর্বলতা রয়েছে কি-না, জানতে চাইলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আসলে ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা নেই বরং দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্তদেরই ম্যানেজমেন্টে নিয়ে আসা হয়েছে বাছাই করে। যারা অনিয়মে জড়িত তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা প্রয়োজন হলেও দেখা যায় সাময়িক সময়ের জন্য অন্য কোনো শাখায় বদলি করছে। এর কিছু দিন পর তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত এই কর্মকর্তারাই ঋণখেলাপি ও অনিয়মে জড়িতদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বসার সুযোগ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব ঘটনার পেছনে অবশ্যই উপরের হাত রয়েছে।’

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com