এরপর ম্যাচের ২৪ মিনিটে আবারো ভালো একটি আক্রমন করে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সকে গোল উপহার দেয়া মান্দজুকিচ বল যোগান দিয়েছিলেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচকে। বল পেয়ে ফ্রান্সের বারের উপর দিয়ে বল মারেন রাকিটিচ।
তবে ২৮ মিনিটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ক্রোয়েশিয়া। কর্ণার থেকে জটলার মধ্যে বল পান মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। বল দখলে নিয়ে কিছুটা বাঁ-দিকে সড়ে গিয়ে ফ্রান্সের গোলমুখে শট নেয়ার পথ তৈরি করে প্রায় ২০ গজ থেকে তীব্র শটে বলকে ফ্রান্সের জালে আশ্রয় দেন পেরিসিচ(১-১)। পেরিসিচের গোলে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনার আরো আক্রমনাত্মক খেলা শুরু করে ক্রোয়েশিয়া।
সমতা এনেও বল দখলে রাখে ক্রোয়েশিয়া। আক্রমনও রচনা করার চেষ্টায় ছিলো তারা। কিন্তু ৩৮ মিনিটে আবারো ভাগ্যের দোষে গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া। বক্সের ভেতর ফ্রান্সের স্ট্রাইকার গ্রিজম্যানের নেয়া কর্ণারে উড়ে আসা বল হাতে লাগে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার পেরিসিচের। এতে পেনাল্টির আবেদন করে ফ্রান্স। কিন্তু দেখতে না পারায় পেনাল্টি এড়িয়ে যান অনফিল্ড রেফারি আর্জেন্টিনার নেস্তর পিতানা। তবে ফরাসিদের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে ভিএআরের সহায়তা নেন পিতানা। ভিডিও’তে স্পষ্টই দেখা যায়, বল পেরিসিচের হাতে লেগেছে। তাই নিজের সিদ্বান্ত থেকে সড়ে এসে পেনাল্টির নির্দেশ দেন পিতানা। পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন গ্রিজম্যান।
২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই ম্যাচের বিরতিতে যায় ফ্রান্স। তবে এসময় বল দখলে এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়াই। ৬৭ শতাংশ বল দখলে রাখতে পারে ক্রোয়েশিয়া। প্রতিপক্ষের সীমানায় আক্রমনেও এগিয়ে ছিলো তারা। সাতবার আক্রমন করে দু’বার ফরাসিদের গোলমুখে শট নেয় ক্রোয়েশিয়া। অপরদিকে, ৩৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ক্রোয়েশিয়ার সীমানায় একবার আক্রমন করে একবারই গোলমুখে শট নিতে পারে ফ্রান্স।
বিরতিতে থেকে ফিরে প্রথম আক্রমন করে ক্রোয়েশিয়া। ৪৮ মিনিটে রাকিটিচের পাস থেকে প্রতিপক্ষের গোলমুখে তীব্র গতির এক শট নেন ডিফেন্ডার সিমে ভার্সালিকো। কিন্তু তার শট ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন।
৫২ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে দুর্বার গতিতে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন ফ্রান্সে স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে। এরপর গোলমুখে শট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলবার ছেড়ে কিছুটা সামনে এসে সেই শট রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ।
এর পর ৫৯ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে আবারো আক্রমন শানায় ফ্রান্স। এবার মিডফিল্ডার পল পগবা। পগবার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে গোলে শট নেন এমবাপে। তার শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে চলে যায় ডি-বক্সের কাছাকাছি। সেখানে বল পান গ্রিজম্যান। আলতো ছোয়ায় সামনেই থাকা পগবাকে বল দেন গ্রিজম্যান। বল পেয়ে ডান পায়ে ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে শট নেন পগবা। সেই শট ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ডেজান লভরেনের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরে আসা বলে এবার বাঁ-পায়ে শট নেন পগবা। তার বল ক্রোয়েশিয়ার জালে চুমু খেলে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে আবারো গোল আদায় করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। ৬৫ মিনিটে এবার গোলদাতাদের তালিকায় নাম তুলেন তরুন-তুর্কি এমবাপে। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ক্রোয়েশিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকার চেষ্টায় ছিলেন ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের কাছাকাছি এমবাপেকে দেখতে পান হার্নান্দেজ। আর তাই এমবাপেকে বল বাড়িয়ে দেন হার্নান্দেজ। বল পেয়ে সামান্য বাঁ-দিকে সড়ে ডান-পায়ের তীব্র শটে বল ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঠান এমবাপে। এই গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে শিরোপা জয়ের আরো কাছে চলে আসে ফ্রান্স।
ফ্রান্সের চতুর্থ গোলের ৪ মিনিট পর ভাগ্যের সহায়তায় ব্যবধান কমায় ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্সের ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমিতিতি বল সড়াতে মধ্যমাঠ থেকে মাইনাস করে দলের গোলরক্ষক হুগো লরিসকে দেন। ততক্ষণে হরিসের সামনে চলে আসেন ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার ও ফরাসিদের প্রথমেই আত্মঘাতি গোল উপহার দেয়া মান্দজুকিচ। ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস বড় সড়াতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বলে পা দিয়ে গোল আদায় করে নেন মান্দজুকিচ। ফলে ব্যবধান কমিয়ে ৪-২ স্কোরলাইন করে ক্রোয়েশিয়া।
শেষদিকে আক্রমন করেও গোল আদায় করে নিতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। গোলের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে জয় নিয়ে দ্বিতীয়বারের বিশ্বকাপ জিতে নেয় ফ্রান্স।