জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে বাজার দর। নতুন করে সবজি, মুরগি এবং আটা, ময়দা, চাল, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। সবকিছুতে ব্যয় বাড়লেও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের আয় বাড়েনি। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
গেল শুক্রবার রাত থেকে দেশে জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধির মাত্র কয়েক ঘণ্টায় বাজারে চড়া দামের মুখোমুখি রাজধানীবাসী। গতকাল রবিবার থেকে তীব্রতা আরও বেড়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে প্রায় সব রকমের সবজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৮০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁকরোল ৭০-৮০, বেগুন ৬০, গাজর ১৩০-১৫০, করলা ৭০-৮০, কাঁচকলা ৩০-৪০, বরবটি ৭০-৮০, কাঁচা মরিচ ২৪০, পেঁপে ৩০-৩৫, ঢেঁড়স ৫০-৬০, লাউ (প্রতি পিস) ৬০-৭০ এবং টমেটো ১১০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে এক রাতের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেন, ১-২ দিন আগেও ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজির দাম ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। রাতারাতি দাম বাড়ার অজুহাত হিসেবে তারাও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার যুক্তি দেখাচ্ছেন। নিত্যপণ্যের বাজারেও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ দেখা যাচ্ছে। আটা, ময়দা, চিনি, চাল ও লবণের দামও বেড়ে গেছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটায় বেড়েছে ২০০ টাকা, ময়দায় বেড়েছে ৭০ টাকা, চিনিতে বেড়েছে ১৩০ টাকা, সব ধরনের চালের বস্তায় বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা।
দু’দিন আগেও লবণ ৩৫, খোলা চিনি ৮০, প্যাকেট চিনি ৮৫ ও খোলা আটা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে লবণ ৩৮, খোলা চিনি ৮৫, প্যাকেট চিনি ৯০ ও আটা ১০২-১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এতে পাইকারি বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ভোক্তার চাহিদা ও ব্যবসায়ীদের বিক্রিও কমেছে।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে রাজধানীর কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল, বাড্ডা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
কাঁঠালবাগানের সবজি বিক্রেতা সজিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। যার প্রভাব দেশের পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সবজিসহ সব পণ্যের মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে।’
বাড্ডা বাজারের পাশে দেখা হয়েছিল দুলাল নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে থাকা এমন কোনো পণ্য নাই যার দাম বাড়ে নাই।’
এদিকে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুদিনের ব্যবধানে মিলারদের থেকে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল কিনতে হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাদের খরচ পড়ছে ৭৩-৭৪ টাকার মতো। যা খোলাবাজারে গিয়ে কেজিতে আরও ২ টাকা বেড়ে ৭৫-৭৬ টাকায় বিক্রি হবে। তাদের ভাষ্য, ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়াতেই এই বাড়তি দাম।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী বিলাল বলেন, ‘জ্বালানির দাম অস্বাভাকিভাবে বেড়ে যাওয়ায় মিলারদের থেকে আমরা বস্তায় ১০০ টাকার বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছি। সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চালে আমাদের খরচ পড়ছে ৭২-৭৩ টাকা। আবার বস্তাপ্রতি পরিবহন শ্রমিকরা ৫ টাকা করে বাড়তি দাবি করছেন। খোলাবাজারে যেতে যেতে আরও বাড়বে অন্তত ২-৩ টাকা। অর্থাৎ ভোক্তাদের প্রতি কেজি চাল ৭৫-৭৬ টাকায় কিনতে হবে। সব মিলিয়ে এবার চালের বাজারে এক অস্থির অবস্থা তৈরি হয়েছে।’