1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘাত বৃদ্ধি, মধ্যস্থতায় উদ্যোগী যুক্তরাষ্ট্র সচিবালয়ে ভাতা দাবিতে অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে নন-ক্যাডার কর্মচারীরা মেগা প্রকল্প বন্ধ করে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের অঙ্গীকার তারেক রহমানের ইমরান খানের সাক্ষাৎ নিষেধাজ্ঞা ঘিরে আদিয়ালা কারাগারে উত্তেজনা, পুলিশের অভিযান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার সুরক্ষায় স্থায়ী কাঠামো গঠনের ওপর জোর এসআই আফতাব উদ্দিন রিগানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের দ্বাদশ বৈঠক শুরু নির্বাচন তফসিল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করছে নির্বাচন কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত আওয়ামী লীগবিষয়ক জনপ্রিয়তা জরিপের নৈতিকতা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের প্রশ্ন

নিয়মের তোয়াক্কা করে না জনতা ব্যাংক

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১০১ বার দেখা হয়েছে

ঋণ দিতে নিয়মের তোয়াক্কা করে না জনতা ব্যাংক। লিমিট অতিরিক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকা সত্ত্বেও জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখার গ্রাহক অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানকে এলসি সুবিধা প্রদান এবং এলসি দায় ব্যাংক থেকে পরিশোধ করায় অনাদায়ী রয়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া অ্যাননটেক্স গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে সমঝোতা স্মারক ও বিআরপিডি সার্কুলারের শর্ত লঙ্ঘন করে সৃষ্ট ঋণের ৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলিকরণ করা হয়েছে। অথচ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধের কারণে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত এ ঋণ পুনঃতফসিল করা নিয়মবহির্ভূত। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ না করে মেসার্স গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডকে এক ঋণের অর্থ দ্বারা অন্য ঋণের দায় সমন্বয়, পিএডি দায় অনাদায়ী থাকা অবস্থায় লিমিট অতিরিক্ত এলসি স্থাপন ও সিসি (হাইপো) খাতে সীমাতিরিক্ত ঋণসহ লিমিট অতিরিক্ত স্বপ্ন সুবিধা প্রদান করায় ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। অথচ এ ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ৩৫৮ কোটি টাকা। ফলে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছেই জনতা ব্যাংকের অনদায়ী ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকারও বেশি। তবে শুধু এ দুটি প্রতিষ্ঠান নয়, আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকেও অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ ও এলসি সুবিধা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের দফতর সম্পাদিত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে এই অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতার অনুকূলে কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনোরূপ ঋণ সুবিধা দেবে না। এখানে খেলাপি দায় থাকা সত্ত্বেও গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি সুবিধা দেওয়ায় পরে তা ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে এলসি সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে দায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ব্যাংকের ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৭ ক (৩) ধারার লঙ্ঘন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতা ব্যাংক, সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা, চট্টগ্রামের গ্রাহক মেসার্স গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের ঋণ নথি, সিএল ও ঋণ হিসাব বিবরণী থেকে দেখা যায়, গ্রাহকের নামে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানির উদ্দেশ্যে এলসি সীমা ৬৫০ কোটি টাকা, এলটিআর ২০৮ কোটি ও সিসি (হাইপো) ২৩০ কোটি টাকা (মোট লিমিট ৬৫০ কোটি টাকার বেশি হবে না) অনুমোদন দেওয়া হয়। গ্রাহকের ঋণ হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসল, সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ ১ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ স্থিতি রয়েছে। গ্রাহকের চলতি হিসাব বিবরণী হতে দেখা যায়, তাদের দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সিসি ঋণের টাকা দ্বারা মেসার্স গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের ঋণের দায় সমন্বয় করা হয়েছে, যা ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তারিখে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিআরপিডি) ৪৪ নম্বর সার্কুলারের লঙ্ঘন।

এ ছাড়া গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ২৫ কোটি টাকা ও ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার দুটি লোকাল এলসি খোলার পর গ্রাহক থেকে ঋণপত্রের দায় আদায় না করে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ব্যতীত শাখার মাধ্যমে গ্রাহকের নামে সমপরিমাণ টাকার দুটি পিএডি দায় সৃষ্টি করা হয়। পিএডি দায় থাকা অবস্থায় গ্রাহককে অনিয়মিতভাবে আরও ২৫টি এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মঞ্জুরিপত্রের এলসি লিমিটের বিশেষ শর্তাবলি (ঝ)-এর ৮নং-এ উল্লেখ করা হয় ‘গ্রাহকের হিসাবে এলসি, পিএডি, আইএফডিবিসি, সিসি ও এলটিআর দায় একত্রে ৬৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হবে না।’ কিন্তু শাখা ওই শর্ত লঙ্ঘন করে ২০২০ সালের ১০ আগস্ট সিসি, এলটিআর ও পিএডি খাতে ৬৫৪ কোটি টাকা দায় থাকা অবস্থায় গ্রাহককে লিমিট অতিরিক্ত আরও ৩০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার ১০টি লোকাল এলসি স্থাপন করে পিএডি দায় সৃষ্টি করা হয় এবং সিসি হিসাব থেকে অনিয়মিতভাবে সীমাতিরিক্ত ৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা উত্তোলনের সুবিধা দেওয়া হয়, যা মঞ্জুরিপত্রের এলসি লিমিটের বিশেষ শর্তাবলি (ঝ) ৮-এর লঙ্ঘন। এ ছাড়া গ্রাহকের সর্বমোট অনাদায়ী দায়ের পরিমাণ ১ হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ৩৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে অডিট বিভাগকে লিখিত জবাবে জানানো হয়েছে, গ্রাহকের অতিরিক্ত ফান্ডেড দায় সমন্বয় করে অনুমোদিত ঋণসীমার মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে এলটিআর দায় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আছে। এক ঋণের টাকা দ্বারা অন্য ঋণের দায় সমন্বয়ের বিষয়ে গ্রাহককে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে গ্রাহক সতর্ক থাকবেন বলে ব্যাংককে জানিয়েছে।

এদিকে জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকার জনতা ভবন করপোরেট শাখার ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নিরীক্ষাকালে দেখা যায়, অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে লিমিট অতিরিক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকা সত্ত্বেও এলসি সুবিধা প্রদান এবং এলসি দায় ব্যাংক থেকে পরিশোধ করায় অনাদায়ী রয়েছে ৫৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। মেসার্স জ্যাকার্ড নীট টেক্স লিমিটেডের সিলি ঋণের লিমিট ছিল ১৫০ কোটি টাকা, দায় ছিল ১৭২ কোটি অর্থাৎ ২২ কোটি টাকার সীমাতিরিক্ত দায় থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি ডেফার্ড ঋণপত্র খোলা হয়। এ সময়ে গ্রাহকের নামে পিএডি (টার্ম লোনে রূপান্তরিত) দায় ছিল ১০১ কোটি টাকা। অনুরূপভাবে মেসার্স সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের নামে দুটি ডেফার্ড এলসি খোলা হয়, তখন গ্রাহকের ১৩৩ কোটি টাকা সীমাতিরিক্ত দায় ছিল। মেসার্স গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেডের পিএডি টার্ম লোনের ৩৫১ কোটি ও পিএডি (ক্যাশ) ৬৯ কোটি টাকা দায় রয়েছে, যার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবার। মেসার্স সুপ্রভ কম্পোজিট নীট লিমিটেডের ২৫৫ কোটি টাকা দায় ছিল, যার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের দায় ছিল ১৫৫ কোটি, যার মেয়াদোত্তীর্ণ হয় ২০১৫ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর। মেসার্স সুপ্রভ রোটর স্পিনিং লিমিটেডের দায় ছিল ১২৩ কোটি টাকা, যার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এলসির বিপরীতে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে ডিমান্ড লোনের অনাদায়ী দায় রয়েছে সুপ্রভ কম্পোজিট নিট লিমিটেডের কাছে ৭০ কোটি, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড ৯৯ কোটি, গ্যালাক্সি সুয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড ৮৪ কোটি ৮৬ লাখ, সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ৮৬ কোটি ৯৪ লাখ, জ্যাকার্ড নাট টেন্স লিমিটেড ১৯১ কোটি এবং সুপ্রভ রোটর স্পিনিং লিমিটেডের কাছে ২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতার অনুকূলে কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কোনোরূপ ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে না। মেসার্স সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের অনুমোদিত এলসি লিমিটের মেয়াদ ২০১৬ উত্তীর্ণ হলেও ২০১৭ সালে ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এলসি সুবিধা দেওয়া হয়। মেয়াদোত্তীর্ণের সময়ে এলসি লিমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। এ সময়ে গ্রাহকের মেয়াদোত্তীর্ণ ও সীমাতিরিক্ত দায়ের পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক অডিট বিভাগকে লিখিত জবাবে জানিয়েছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হওয়ায় ও লিমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় শাখা থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আর কোনো এলসি সুবিধা দেওয়া হয়নি। গ্রাহকের হিসাবে ঋণপত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে জাহাজী দলিলের বিলমূল্য মেয়াদপূর্তিতে পরিশোধের লক্ষ্যে গ্রাহককে মূল্য প্রদানের তাগাদা দেওয়া হলেও গ্রাহক কোনো অর্থ শাখায় জমা করেনি। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাংকের সুনাম রক্ষার্থে গ্রাহকের হিসাবে ফোর্সড লোন সৃষ্টির মাধ্যমে বিলমূল্য পরিশোধ করা হয়। অডিট বিভাগ এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ও ঋণ তদারকি সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণসহ সমুদয় টাকা আদায়ের সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া অ্যাননটেক্স গ্রুপকে সমঝোতা স্মারক ও বিআরপিডি সার্কুলারের শর্ত লঙ্ঘন করে সৃষ্ট ঋণের ৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলিকরণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জনতা ভবন করপোরেট শাখার অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের ঋণের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবরের সভায় ৭টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সভায় ১টি প্রতিষ্ঠানের ৪৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দশ বছর মেয়াদে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আদায়যোগ্য করে পুনঃতফসিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে জনতা ব্যাংক লিমিটেড সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কোনো ফোর্সড লোন বা ডিমান্ড লোন তিন বছর বা এর বেশি মেয়াদে পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি অনুযায়ী মেয়াদি ঋণের ন্যায় প্রযোজ্য হারে জামানত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ক্রমিক ৪.১.৫ অনুযায়ী প্রত্যেক ঋণের বিপরীতে ন্যূনতম ১ দশমিক ৫ গুণ মূল্যের সহজামানত গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকদের এ ঋণগুলো ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা হয়েছে শর্ত মোতাবেক জামানত ছাড়াই, যা সমঝোতা স্মারকের শর্তের লঙ্ঘন। ২০১৯ সালের বিআরপিডি সার্কুলার নং-৫-এর শর্ত মোতাবেক ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট নগদে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তা না করে ১ শতাংশ হিসেবে ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ করে পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

একই গ্রুপভুক্ত ৮টি প্রতিষ্ঠানের পিএডি, ডিমান্ড লোন ও প্রজেক্ট ঋণ ২০১৯ সালের ১৬ মে বিআরপিডি সার্কুলার মোতাবেক পুনঃতফসিল করা হয়েছে। বিআরপিডি সার্কুলারের শর্ত অনুযায়ী যেসব ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হয়েছে তাদের ঋণ ওই সার্কুলার মোতাবেক পুনঃতফসিল করা যাবে। কিন্তু অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত নয়। কারণ গ্রাহকের নামে সৃষ্ট পিএডি ও ডিমান্ড লোন মূলত জাল জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধের কারণে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হয়েছে। ফলে এই গ্রাহক ওই সার্কুলার মোতাবেক পুনঃতফসিল প্রাপ্য নয় বলে অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও এই গ্রাহকের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে অডিট বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট আদায় করে পুনঃতফসিলের জন্য পরিচালনা পর্ষদে বোর্ড মেমো পাঠানো হলে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও ১ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট আদায় করে পুনঃতফসিল অনাপত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ৫টি প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি সোয়েটারস অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড, জ্যাকার্ড নীট টেক্স লিমিটেড, সুপ্রভ কম্পোজিট লিমিটেড, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড এবং সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের হিসাবে ঋণপত্র প্রতিষ্ঠার বিপরীতে জাহাজী দলিলের মেয়াদপূর্তিতে পরিশোধ না করায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাংকের সুনাম রক্ষার্থে গ্রাহকদের হিসাবে ফোর্সড লোন সৃষ্টি করে বিলমূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। টার্ম লোনের (পিএডি) বিপরীতে ১ দশমিক ১ অনুপাতে জামানত দেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট বাবদ নগদে ৪৪ কোটি টাকা আদায় করার পর পুনঃতফসিল প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

তবে জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং সম্পৃক্ত অপরাধের কারণে মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত ঋণ পুনঃতফসিল সঠিক হয়নি এবং ওই পুনঃতফসিলের সময় সমঝোতা স্মারক ও ক্রেডিট পলিসির শর্ত মোতাবেক সহজ আমানত গ্রহণ করা হয়নি বিধায় জড়িতদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণসহ ঋণের সমুদয় অর্থ আদায় করা আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছে অডিট বিভাগ।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com