মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের এ উদ্যোগে আন্দোলনের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানান, আলোচনার মাধ্যমে সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে এবং বুধবার (২২ অক্টোবর) থেকে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) এবং ২০২৬ সালের জুলাই থেকে মোট ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া কার্যকর হবে। এটি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল সাড়া।”
তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা, মতবিনিময় ও নীতি-পর্যালোচনা করা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে একাধিক সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি শুনে ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
খালিদ মাহমুদ বলেন, “এই পথ সহজ ছিল না। মতভেদ, বিতর্ক ও অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রমাগতভাবে একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করেছে। এটি কোনো ব্যক্তি বা পক্ষের জয় নয়, বরং যৌথ সাফল্য।”
গত ১০ দিন ধরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশন করছিলেন। তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি ছিল বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
এর আগে গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তবে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান।
শিক্ষক আন্দোলনের প্রতি বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (এনসিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা সংহতি প্রকাশ করেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষক আন্দোলনের অবসান ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই ধাপে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ফলে শিক্ষকদের আর্থিক চাপ কিছুটা কমবে। তবে আন্দোলনের সময় শিক্ষক সমাজ যে ন্যায্যতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তা ভবিষ্যতে শিক্ষাখাতে নীতি-সংস্কারের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, শিক্ষা কার্যক্রমে গত কয়েক সপ্তাহের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছে, এই সমঝোতার মাধ্যমে শিক্ষক, প্রশাসন ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠিত হবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।