নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও স্বতন্ত্র সংসদ প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত জীবিত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোনো বন্দুকযুদ্ধ বা কথিত ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনা প্রত্যাশিত নয়; বরং হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানানো হয়। পোস্টে বলা হয়, পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবাইকে দ্রুত শনাক্ত করে জীবিত গ্রেপ্তার করতে হবে। সংগঠনটির দাবি, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের নাটকীয়তা বা অস্বচ্ছতা গ্রহণযোগ্য নয়।
শরিফ ওসমান বিন হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অবস্থান জনসমক্ষে তুলে ধরতেন। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা শরিফ ওসমান বিন হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শে ১৫ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান বিন হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তিনি নিবিড় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গন ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আইনগত প্রক্রিয়াও শুরু হয়। গুলির ঘটনার পর ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পরে শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে এবং দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন দিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড কেবল একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে সংঘটিত হয়নি; বরং এটি একটি রাজনৈতিক সহিংসতার উদাহরণ, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগজনক। সংগঠনটির মতে, সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতার ঝুঁকি থেকে যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে এ ধরনের সহিংস ঘটনা জননিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের নজরে রয়েছে। এই ঘটনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে কি না, তা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।