অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। প্রতিনিধি দলে মোট পাঁচজন সদস্য থাকবেন। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও বৈঠকের সময়সূচি ও এজেন্ডা সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক সংলাপের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবেই জামায়াতের সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) একই স্থানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। সে বৈঠকেও দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে করণীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন এবং জাতীয় সংলাপের সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ব্যাপক আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করাই এই প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য বলে তার কার্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, জুলাই মাসে ঘোষিত ‘জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই সনদে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের সুপারিশসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংলাপ কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এ ধরনের আলোচনার সফলতা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার ওপর।
এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকেও সংলাপে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য জানান, দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এবং সংবিধানসম্মত সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে চান।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন কর্মসূচি ও নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে চলমান সংলাপ প্রক্রিয়াকে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ভিত্তি তৈরি করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই সংলাপগুলো বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করতে পারে।