বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনে নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে, এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তার দলের অবস্থান সুস্পষ্ট।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারত বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ, এবং তার দলের সরকার গঠিত হলে দুই দেশের সম্পর্ক হবে সম্মান এবং সমঝোতার ভিত্তিতে। তিনি মন্তব্য করেন, “মানুষ তার বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো সম্ভব নয়। আমাদের প্রতিবেশীদের সম্মান করা উচিত এবং আমাদেরও তাদের কাছ থেকে সম্মান প্রত্যাশা করতে হবে।”
জামায়াতের আমির বলেন, ভারতের আয়তন বাংলাদেশের তুলনায় ২৬ গুণ বড়, এবং তাদের সম্পদ ও জনশক্তি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের অস্তিত্বের প্রতি ভারতকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে সম্মান করতে চাই, তবে আমাদেরও নিজেদের মর্যাদা রাখতে হবে।”
ডা. শফিকুর রহমানের মতে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালো হবে না, বরং সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে দুই প্রতিবেশীই একে অপরকে বিশ্ব দরবারে আরও বেশি সম্মানিত করতে সক্ষম হবে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির তার দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, জামায়াত কখনোই মেজোরিটি ও মাইনরিটি ধারণায় বিশ্বাস করে না, বরং তারা বিশ্বাস করে যে, জাতি ও সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা বলি, ‘আমরা একত্রে থাকতে চাই’। মেজোরিটি-মাইনরিটি বিভাজন সমাজে বিভেদ তৈরি করে, যা দেশের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
জামায়াত আমির দাবি করেন, বাংলাদেশের গত ৫৪ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অভিবাসনের ঘটনা ঘটেছে এবং তার দল কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য সৃষ্টি বা জোর করে কাউকে দেশ থেকে তাড়ানোর পক্ষে নয়।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বহু বছর ধরে নানা ধর্মের মানুষ মিশ্রিতভাবে বসবাস করছে এবং এর ফলে জাতিগত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিছু কালো দাগ পড়লেও, আমরা সেগুলো উপড়ে ফেলতে চাই, যাতে দল ও ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন সৃষ্টি না হয়।”
রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবে। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী গত ৫৪ বছরে অন্যের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে থাকে, তবে তাদের সেই সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।”
এছাড়া, ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে কোনো শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, বৃহত্তর স্বার্থে তিনি এই বিষয়টি আপাতত এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি সফরের অন্যান্য উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেননি।
জামায়াত আমির তার দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক লক্ষ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “আমরা দেশের জনগণের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং শক্তিশালী জাতি গঠন করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি না করে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।” তিনি আরও বলেন, জামায়াত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নতি এবং সামাজিক শান্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
এদিকে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কে আয়োজিত সভায় স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।