দেশের নদী ও পরিবেশের সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, “ডলফিন আমাদের নদীর সুস্থতার প্রতীক। যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে, আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে।”
রোববার (১৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। অনুষ্ঠানে রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথা বলা। কারণ, নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও।”
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিজেদের নদীগুলোকে দূষিত করছি, অথচ নিজেদের সভ্য জাতি দাবি করছি—এটা পরস্পরবিরোধী।” তিনি মনে করেন, নদী ও তার বাস্তুসংস্থান রক্ষার জন্য জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও জানান, “ডলফিনের সংখ্যা বাড়লে বুঝতে হবে আমরা নদী রক্ষা করছি; আর কমলে বুঝতে হবে আমরা নদীগুলোকে বিপদে ফেলেছি।”
বন্যপ্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তনকেও অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন।” এ ধরনের নিষ্ঠুরতা রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
তিনি আরও যোগ করেন, “বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমরা যদি সঠিক মনোভাব নিয়ে কাজ করি, তবে একদিন পুরো সমাজই এই আন্দোলনে অংশ নেবে।”
দেশের প্রতিটি জেলায় বনবিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।”
এছাড়াও, বন্যপ্রাণী রক্ষায় যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, “মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মঙ্গল একসূত্রে গাঁথা। আমরা যদি প্রাণীদের বাঁচাই, প্রকৃতি আমাদেরও বাঁচাবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ এর ড. মো. ইশতিয়াক সোবহা। তারা সবাই ডলফিন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং নদী রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় “গাঙ্গেয় ডলফিন সংরক্ষণ হ্যান্ডবুক” এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং ডলফিন সংক্রান্ত একটি শিক্ষামূলক প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্যে ডলফিনের সংরক্ষণ, নদী রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সুরক্ষার মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়েছে। তার মতে, ডলফিন রক্ষা শুধু একটি প্রাণী রক্ষার বিষয় নয়, বরং এটি মানবসভ্যতার এবং পরিবেশের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। নদী দূষণ, বনধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ করতে হলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।