কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সকল নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ কমিটি এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়। নিয়োগ কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভও করেছেন, যার ফলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। তবে, পরীক্ষার পর থেকেই কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেন যে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমাম এবং কিছু অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, গভীর রাত থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে এবং এর বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং বিক্ষোভকারীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। তারা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দুটি নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের লোকজন তালাটি খুলে ফেলেন, তবে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে—কারণ আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা তালা খোলেননি।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২০১৮ সালে ১১৫টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, তবে সেসময়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং চাকরির জন্য প্রায় ৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এদিকে, সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন দাবি করেছেন, নিয়োগ কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন এবং কোনভাবেই বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
তবে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, নিয়োগ কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “নিয়োগ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, অনিবার্য কারণে নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।”
সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন আরও বলেন, ঘটনার তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তদন্তের পর যদি কোন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল পুনঃপরীক্ষা করা হবে। এর আগে, সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়েছে যে, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করবেন এবং যদি অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, এই ঘটনার পরবর্তী ফলাফল কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়, এবং স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করছে।