গাজা সিটি: ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের গাজার পুনর্গঠনকাজ বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন হাজারো মানুষ, আর চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বিপুল পরিমাণ বোমা। অবিস্ফোরিত এই বোমাগুলোর পরিমাণ হাজার হাজার টন, যা মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। এদিকে, মানবিক সহায়তা ও ভারী যন্ত্রপাতি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় গাজার মানুষদের জীবন আরও বিপন্ন হয়ে পড়েছে, বলেছে আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন।
গাজার পুনর্গঠনকাজ বর্তমানে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, কারণ ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। গাজার মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, শহরের ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠন করতে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি এবং অন্তত এক হাজার টন সিমেন্টের প্রয়োজন। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “গাজায় হাজার হাজার টন বিস্ফোরিত না হওয়া বোমা এখন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।”
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা এবং জরুরি সরঞ্জাম প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এমনকি গত এক সপ্তাহে মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় পৌঁছেছে, যা বর্তমান চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য।
গাজার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, “এত বড় চাহিদার বিপরীতে, গাজার পুনর্গঠনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো মূলত ইসরায়েলি বন্দিদের মৃতদেহ উদ্ধারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের নয়।” তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা জানেন, যতক্ষণ না সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে কোনো অগ্রগতি হবে না।”
রোববার, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একটি ভাষণে বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করবে, তা নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র ইসরায়েলের রয়েছে। তিনি দাবি করেন, “আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি এবং আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জানিয়েছি, গাজায় কোন বাহিনী গ্রহণযোগ্য নয়, তা আমরাই নির্ধারণ করব।” নেতানিয়াহু আরও বলেন, এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রও মেনে নিয়েছে।
গাজার পুনর্গঠনকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট জানিয়েছেন, “গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশেই বোমা পড়েছে, এবং অনেকগুলো বোমা এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।” তিনি বলেন, “এই গোলাবারুদ অপসারণে সময় লাগছে, যা পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে বিলম্বিত করছে।”
তিনি আরও জানান, “বোমাগুলো অপসারণের জন্য জটিল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না, বরং ছোট যান বা হাতে নিয়েও এই কাজ করা সম্ভব। তবে, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়।”
ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি। এসব অবিস্ফোরিত বোমা মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে গাজার মানুষকে শুধু ধ্বংসস্তূপ সরানো ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা না পাওয়ার সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে, বরং বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলোর ঝুঁকি তাদের জীবনে প্রতিদিনের হুমকি হয়ে উঠেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গাজার এই মানবিক সংকটের জন্য ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।