ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধার করতে গাজায় হামাস-এর সাথে মিসর ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস (আইসিআরসি) যোগ দিয়েছে, যা গত ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। এই উদ্ধার কাজটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র-এর মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে, যার আওতায় গাজায় নিহত সব ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহের প্রতিস্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, মিসর ও রেড ক্রসের দলকে গাজার ইয়েলো লাইন বা ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরেও অনুসন্ধান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইয়েলো লাইন হল গাজার উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ সীমারেখা, যা অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপে নির্ধারিত হয়েছে। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ এবং রেড ক্রস যৌথভাবে খননযন্ত্র ও ট্রাক ব্যবহার করে মরদেহ উদ্ধার করবে।
এছাড়া, হামাস-কেও উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য রেড ক্রসের সাথে গাজার ইয়েলো লাইনের বাইরে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত, অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস ২৮ জন নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ রেড ক্রস এবং মিসরীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে।
রেড ক্রসের মাধ্যমে হামাস সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করে না। বরং, রেড ক্রসই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। তবে, এবার মিসরীয় উদ্ধার দল গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে, যা একটি নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে। এটি মিসর-এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে গাজার সংকট সমাধানে ভূমিকা রেখে আসছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় প্রায় ৮৪ শতাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। উদ্ধার কাজ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ এবং ভবন ধসে পড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করবে, তা নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা ইসরায়েলের হাতে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেই নিয়ন্ত্রণ করি, এবং ইসরায়েলই ঠিক করবে কোন আন্তর্জাতিক বাহিনী গ্রহণযোগ্য আর কোনটি নয়।” এই মন্তব্যটি বিশেষ করে তুরস্ক-এর অংশগ্রহণ নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি প্রকাশ করছে, কারণ তুরস্ক গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনীর অংশ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছিলেন, অনেক দেশ গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর অংশ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে ইসরায়েলের সম্মতি ছাড়া কাউকেও গাজার নিরাপত্তায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশয় রয়েছে, কারণ হামাসের সাথে সমঝোতা ছাড়া গাজায় একটি বাহিনী মোতায়েন করা কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এভাবে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে মিসর এবং রেড ক্রস-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি, এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সহায়তার কার্যক্রমে আরও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।