রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দিলেও, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের সময় ও স্থান চূড়ান্ত করেনি।
রোববার, হাঙ্গেরির ইউটিউব চ্যানেল আল্ট্রাহাং-এ এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রস্তুতি শুরু করার কথা বলেছিলেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের জন্য প্রস্তুত, তবে এর নিয়ন্ত্রণ ওয়াশিংটনের হাতে।”
ল্যাভরভ জানান, তিনি এবং তাঁর দল কোনো আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই সাড়া দেয়। তবে, পরবর্তীতে আমন্ত্রণ বাতিল হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, আমন্ত্রণ বাতিল মানে আসলে স্থগিত করা হয়েছে। “এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই, যারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল,” বলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ল্যাভরভ আরও জানান, সম্প্রতি তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র সাথে একটি ফোনালাপে অংশ নিয়েছেন, যা তিনি অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ফোনালাপটি যুক্তরাষ্ট্র-এর পক্ষ থেকে এসেছিল এবং এটি খুবই সফল ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি।”
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমাদের বাফার জোন দরকার।” ইউক্রেনের গোলাবর্ষণ, বোমাবর্ষণ এবং ড্রোন হামলা রাশিয়ার ভূখণ্ডে (যেমন ব্রিয়ানস্ক, বেলগোরদ, কুরস্ক) হামলা চালানো হচ্ছে, যা কখনো বিতর্কের বিষয় ছিল না।
ল্যাভরভ দাবি করেন, রাশিয়ার লক্ষ্য অপরিবর্তিত। কিয়েভকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে, ন্যাটো-তে যোগ না দেওয়া, পারমাণবিক অস্ত্র না রাখা এবং রুশভাষীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এবং ইউক্রেন নিষেধজ্ঞ যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দিচ্ছে, যা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি আরও বলেন, “এটি রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত সমস্যাজনক এবং এ ধরনের চাপের ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠছে।”
ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদ প্রসঙ্গে ল্যাভরভ বলেন, “এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।” তাঁর মতে, ন্যাটো সম্প্রসারণের ফলে ইউরোপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে এবং এটি রাশিয়া-এর জন্য একটি বড় হুমকি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মন্তব্যে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এবং বৈঠক পরিকল্পনা নির্ভর করছে, এবং এ নিয়ে রাশিয়া এখনো অপেক্ষায় রয়েছে। ইউক্রেন সংকট এবং ন্যাটো প্রসঙ্গে রাশিয়ার পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।