বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আজ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি সিরিজ, যেখানে তারা আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি শানিত করবে।
আগামী ২০২৫ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দুইটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে—এগুলো হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বর্তমান সিরিজ এবং আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ। এ দুটি সিরিজের মাধ্যমে টাইগাররা বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি পরিপূর্ণ করবে।
বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। গত কয়েকটি সিরিজে বাংলাদেশের দল আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জয় তুলে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরপর জয় পেয়ে তারা তাদের টি-টোয়েন্টি শক্তি প্রমাণ করেছে।
বাংলাদেশের জন্য সুখবর হলো, দীর্ঘদিন পর নিয়মিত অধিনায়ক লিটন দাস দলে ফিরে এসেছেন। সাইড স্ট্রেইন ইনজুরির কারণে লিটন সম্প্রতি খেলতে পারেননি, কিন্তু এই সিরিজে ফিরে তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন। লিটনের ফর্মও অত্যন্ত ভালো। তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বশেষ ৭ ইনিংসে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
লিটন দাস সিরিজের আগে বলেছেন, “এই সিরিজ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কিন্তু এটা আমাদের জন্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতির একটি সুযোগ। যদি এই সিরিজগুলোতে ভালো পারফর্ম করতে পারি, তবে আমরা বিশ্বকাপে আরও শক্তিশালী হতে পারব।”
অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলও তাদের শক্তি বাড়াতে সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শাই হোপের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত হয়েছে। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তারা শক্তিশালী এবং সিরিজে জয়ের জন্য তাদের পুরনো তারকা ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভর করবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোয়াডে আছেন জেসন হোল্ডার, রোস্টন চেজ, রোভম্যান পাওয়েল, শেরফান রাদারফোর্ড, ব্র্যান্ডন কিং সহ আরও কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করা।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৮টি ম্যাচ জিতেছে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯টি ম্যাচ জিতেছে। এছাড়া দুইটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সমতা রয়েছে এমন সিরিজ, যদিও সাম্প্রতিক ফলাফল বাংলাদেশ দলের পক্ষে রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জয় করেছে।
বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজের মূল লক্ষ্য হবে তাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি সমাপ্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, দলটি তাদের শক্তি এবং ফর্ম পর্যালোচনা করার সুযোগ পাবে। সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য একটি মূল্যবান ট্রায়াল হবে, যেখানে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরীক্ষা করবে। বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি অভিজ্ঞরা নতুন দায়িত্বে আসবেন, এবং দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে এ সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ দলের ঘোষিত স্কোয়াডে আছেন:
লিটন দাস (অধিনায়ক)
তানজিদ হাসান তামিম
পারভেজ হোসেন ইমন
সাইফ হাসান
তাওহিদ হৃদয়
জাকের আলী অনিক
শামীম পাটোয়ারী
নুরুল হাসান সোহান
শেখ মেহেদী হাসান
রিশাদ হোসেন
নাসুম আহমেদ
মুস্তাফিজুর রহমান
তানজিম হাসান সাকিব
তাসকিন আহমেদ
শরিফুল ইসলাম
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোয়াডে আছেন:
শাই হোপ (অধিনায়ক)
অ্যালিক আথানাজে
আকিম আগস্তে
রোস্টন চেজ
জেসন হোল্ডার
আকিল হোসেন
আমির জাঙ্গু
ব্র্যান্ডন কিং
গুডাকেশ মোটি
রোভম্যান পাওয়েল
শেরফান রাদারফোর্ড
জেইডেন সিলস
রোমারিও শেফার্ড
র্যামন সিমন্ডস
বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার এই সিরিজটি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দলের জন্যই এটি একটি কঠিন পরীক্ষা হবে, যেখানে তারা নিজেদের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করবে। সিরিজের ফলাফল বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে, এবং এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে তাদের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলি।