গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের হামলা থামছে না, বরং পশ্চিম তীর, সিরিয়া, লেবাননসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতায় এই হামলা আরও তীব্র হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
গত ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও ইসরায়েলি বাহিনী এখনও সেখানে হামলা চালাচ্ছে। আল-আউদা হাসপাতাল জানিয়েছে, শনিবার রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় এক ব্যক্তি নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, ইসরায়েল রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগে বাধা প্রদান করছে, এমনকি ক্যান্সারের রোগীকেও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এটি গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর দমন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ১,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জলপাই সংগ্রহ করতে বাধা দিচ্ছে, হেনস্তা ও গ্রেপ্তারও করছে। একই সময়ে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের “সার্বভৌমত্ব” ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে ঠেকানো যায়।
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা বেড়েছে। ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই সিরিয়ার ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে এবং সেখানে সামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। গত রোববার, ইসরায়েল বাহিনী দক্ষিণ সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশে চেকপোস্ট স্থাপন করে এবং স্থানীয় রুটি সরবরাহকারীকে আটক করে। সিরিয়া এই হামলাকে নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইসরায়েলকে সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে সরে যেতে বলেছে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও, ইসরায়েল এখনো লেবাননের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক হামলায় বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং পুনর্গঠন কার্যক্রমের যন্ত্রপাতিও ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করছে, হিজবুল্লাহর পুনর্গঠন ঠেকাতে এসব হামলা চালানো হচ্ছে, তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এমন কোনো শর্ত ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইসরায়েল সফর করলেও, ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি। মার্কিন প্রশাসন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, ইসরায়েলের পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননজুড়ে চলমান হামলা এবং সংঘাত নিয়ে তেমন কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করছে না।
ইসরায়েলের আক্রমণ অব্যাহত থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ইসরায়েলীয় বাহিনী গাজা, পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননে হামলা চালিয়ে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতায় এই সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও ভয়াবহ হতে পারে।